ডাঃ নুসরাত সুলতানাঃ
এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি যে, দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও ব্রণ কমছেনা, বা যতদিন চিকিৎসা নেন, ততদিন কম থাকে, পরবর্তীতে আবারো হয়।
মূলত, আমরা অনেকেই জানিনা, চিকিৎসক এর চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে এই ব্রণের পূণরাবৃত্তি কমিয়ে আনতে পারি অনেকটাই।
🍇🍉🍊🍎🍒🍋🍏🍐🍈🍍🍒🍅🍓
খাদ্যাভ্যাসঃ
কী খাবেন না?
১। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, উচ্চ গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স যুক্ত খাবার/ রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বা সুগার, যেমনঃ সাদা রুটি, আলুর চিপ্স, বিস্কুট, চিনি ইত্যাদি, এছাড়া উচ্চ মাত্রায় প্রসেসড ফুড, যেমনঃ ক্যান ফুড ইত্যাদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরে তৈরি করে হাইপার ইন্সুলিনেমিয়া, যা মূলত ব্রণ এবং অধিক ওজনের জন্য দায়ী।
তাই, সাদা চাল বা আটার পরিবর্তে ব্রাউন চাল, ব্রাউন আটা, ব্রাউন সুগারকে প্রাধান্য দিন খাবারে।
২। আধুনিক গবেষণা বলছে, দুধ ও ডেইরি খাবার রক্তে টেস্টোস্টেরন প্রিকারসার হরমোন, ব্রণের জন্য দায়ী গ্রোথ ফ্যক্টর ও ইন্সুলিনের মাত্রা বাড়ায়। এর মধ্যে দুধের প্রোটিন, বিশেষত ক্যাসিন ও হোয়েয় ব্রণের জন্য প্রধান দায়ী।
এক্ষেত্রে, আপনি আমন্ড, সয় বেজড দুধ বেছে নিতে পারেন। এতে ক্যালসিয়াম এর চাহিদাও পূরণ হবে।
ব্রণের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চকোলেট, আইস্ক্রিম এড়িয়ে চলুন।
৩। অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড বা ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার, ফ্রাইড ও প্রসেসড, বেকড খাবার (মূলত ফাস্ট ফুড), ক্যানড ফুড রক্তে প্রো ইনফ্লাম্যাটরি সাইটোকাইন এর মাত্রা বাড়ায়, যা ত্বকে ইনফ্লামেশন করে ব্রণের সৃষ্টি করে।
✅কী খাবেন?
১। মাছ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি, যেমন ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ব্রণের প্রকোপ কমাতে ও অতরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। স্যামন মাছ বা অন্যান্য সামূদ্রিক মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাটি আসিড সমৃদ্ধ। এছাড়া এভোকাডো, বাদাম (এতে আছে জিংক), চায়া সীড ইত্যাদি ব্রণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।
২। এন্টিঅক্সিডেন্টঃ উজ্জ্বল রঙ এর ফল, শাকসবজি, যেমনঃ গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, পালং শাক, বেরি জাতীয় ফল, এগুলোতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শরীর ও ত্বককে সুস্থ রাখে, রোধ করে করে অযাচিত বয়সের ছাপও।
৩। প্রোবায়োটিক হলো আমাদের খাদ্যান্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া। দই বা বিভিন্ন প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট থেকে আমরা এটা পেতে পারি।
সুস্থ, অবসাদমুক্ত জীবনঃ
পর্যাপ্ত ঘুম এর অভাব, মানসিক চাপ ব্রণের জন্য দায়ী। মানসিক অবসাদ শরীরে কর্টিসল এর মাত্রা বাড়ায়, যা ত্বকে তেল (sebum) এর নিঃসরণ বাড়িয়ে ব্রণের প্রকোপ তৈরি করে এবং মেদও বাড়িয়ে দেয়।
তাই দৈনন্দিন হাল্কা ব্যায়াম, মেডিটেশন, বই পড়া, যা কিছু আপনার মনে প্রশান্তি আনে, তেমন সৃজনশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন। এতে আপনার ঘুম যেমন ভাল হবে, শরীরের ও মনের অবসাদ বা ক্লান্তিও থাকবেনা।
এছাড়া আজকাল আমাদের প্রায় সবারই দীর্ঘ সময়, গভীর রাত অব্দি কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে কাজ করার অভ্যাস। এই স্ক্রীনের আলো, চুলার তাপ ও সূর্যের তাপ আমাদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট করার পাশাপাশি ব্রণের জন্যও কিন্তু দায়ী।
তাই, দীর্ঘক্ষন, বিশেষ করে গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যাবহার বন্ধ করা বাঞ্চণীয়। চুলা বা সূর্যের তাপে যাবার আগে ব্রড স্পেক্ট্রাম সান স্ক্রিন ক্রিম লাগানোও একটি অতীব জরুরি করণীয়।
পরামর্শেঃ
ডাঃ নুসরাত সুলতানা
ক্লিনিকাল, কস্মেটিক ডার্মাটোলজিস্ট এন্ড লেজার স্পেশালিষ্ট।