স্টাফ রিপোর্টারঃ
কেবিন নম্বর ১১৭। ‘কবিভবন’ থেকে এই কেবিনেই কবিকে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। যেখানে মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। টানা ১ বছর ১ মাস ৮ দিন এই কেবিনেই ছিলেন কবি। কবির মৃত্যুর ৪৫ বছরে এসে নজরুল স্মৃতিধন্য কক্ষ হিসেবে উদ্বোধন করা হলো। সাজানো হয়েছে কবির ছবি দিয়ে। কেবিনটি কবির স্মৃতিধন্য জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত থাকবে।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় কেবিন ১১৭-এর উদ্বোধন করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধন শেষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় অংশ নেন।
এ সময় তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই চিকিৎসকদের পরামর্শে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘কবিভবন’ থেকে কবিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন আই পিজি এম আর)-এর ১১৭ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করেন। এই কেবিনে চিকিৎসক ও নার্সদের নিবিড় যত্ন ও সেবা দেওয়া হয় মানবতার কবিকে। বিভিন্ন সময়ে কবির চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের তৎকালীন মহাপরিচালক ডা. মেজর এ চৌধুরী, পরবর্তী সময়ে জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম, ডা. নাজিমুদ্দৌলা, ডা. আশিকুর রহমান খান প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর অনুমতি নিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেন ডা. বায়েজিদ খান। কবির সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানে যুক্ত ছিলেন সেবিকা শামসুন্নাহার ও সেবক ওয়াহিদুল্লাহ ভুঁইয়া।
মৃত্যুর পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে শান্ত, সবুজ পরিবেশে সমাহিত করা হয় জাতীয় কবির মরদেহ। সব সুর থেমে যায়; কিন্তু আজও মধুর বাঁশুরি বাজে। তিনি আছেন আমাদের চেতনায়, অন্তরের অন্তঃস্থলে এবং থাকবেনও চিরকাল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রবাদপুরুষ উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শোষিতের পক্ষে আর শোষকদের বিরুদ্ধে আজন্ম বিদ্রোহী কবি জীবন-সায়াহ্নে এসে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অমর কবির মৃত্যু নেই- কোটি বাঙালির কণ্ঠে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-এর ১১৭ নম্বর কেবিনটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ বিদায়ের স্মৃতিধন্য, বাঙালির তীর্থস্থান এবং এই কেবিনটি জাতীয় কবির স্মৃতিধন্য জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত থাকবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ১৯৪২ সালে জাতীয় কবির নিউরোডিসঅর্ডারজনিত জটিল ব্যাধি ধরা পড়ে। এ ভয়ঙ্কর রোগের কারণে ৩৪ বছরের বেশি সাহিত্য ও সঙ্গীত জগৎ কর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও ধূমকেতু, ভাঙার গান ও অগ্নিবীণার স্রষ্টা এ মহান কবির সাম্য-সম্প্রীতি-মানবতার বাণী আমাদের চিরকালেরই প্রেরণা।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিদ্রোহী কবির স্মৃতিধন্য সেই ঐতিহাসিক ১১৭ নম্বর কেবিন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন। এটা একটি অসাধারণ উদ্যোগ এবং আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের জন্য আমাদের জাতীয় কবিকে জানতে ও জাতীয় কবির স্মৃতি সংরক্ষণে এই উদ্যোগ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, বিএসএমএমইউর ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল প্রমুখ।