তানভীর হাসান বিপ্লব:
সকাল থেকে তিন ঘণ্টা ধরে আমার স্ত্রীর প্রসববেদনা। হন্য হয়ে একটি গাড়ি খুঁজেছি। কিন্তু কোনো গাড়িই চেকপোস্টের ভয়ে হাসপাতালের দিকে যেতে চাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত পুলিশ আমাকে আটকালে ওনাদের সব খুলে বলি। আমার ভাগ্য ভালো ওসি স্যারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। উনাকে বলা মাত্র উনি একটি অ্যাম্বুলেন্স ফোন দেন। কিন্তু সেইটি আসতে দেরি হবে দেখে নিজের গাড়ি দিয়ে দিলেন আমাদের হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। হাসপাতালে পৌঁছার ১০ মিনিটের মধ্যেই আমার স্ত্রী একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন।’
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সামনে এসব কথা বলেন রেজাউল করিম নামে এক ভ্যানচালক।
কাঁন্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ওসি স্যারের গাড়ি না পেলে হয়তো আমার সন্তান মারা যেত। কারণ হাসপাতালে পৌঁছার মাত্র ১০ মিনিট পর অপারেশনের মাধ্যমে আমার স্ত্রী সন্তান প্রসব করেন। গাড়ি খোঁজা-খুঁজি করতে গিয়ে যদি আরও দেরি হত, তবে আমার সন্তান না বাঁচার সম্ভাবনা ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। পাশাপাশি ওসি স্যারের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যাতে উনাকে এর উত্তম পুরস্কার দেন।
এসময় রেজাউল আরও বলেন, বর্তমানে আমার ছেলে সুস্থ আছে। কিন্তু আমার স্ত্রীর জ্বর দেখা দেয়ায় তাকে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশব্যাপী চলমান কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন সোমবার সকাল ৮টা থেকে প্রসববেদনা শুরু হয় চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানা এলাকার বাসিন্দা হেনা বেগমের (২৬)। তাকে হাসপাতালে নিতে তার ভ্যানচালক স্বামী রেজাউল করিম (৩৫) খুঁজতে থাকেন একটি গাড়ি। কিন্তু সকাল বেলার ওই সময়ে চেকপোস্ট বেশি থাকায় কোনো গাড়িই হাসপাতালের দিকে যেতে চাচ্ছিলেন না। গাড়ি খোঁজা-খুঁজির একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে থানার চৌমুহনী মোড়ে থেকে আটকায় পুলিশ। এরপর লকডাউনে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রেজাউল পুলিশকে সব খুলে বলে। তার প্রয়োজনীতার কথা শুনে সেখানে কর্তব্যরত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন প্রথমে একটি অ্যাম্বুলেন্স ফোন দেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি করায় শেষমেশ নিজের গাড়ি দিয়েই প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, চলমান লকডাউনে আমি থানার বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছিলাম। এ সময় রেজাউল করিমকে সড়কে হাঁটা-হাঁটি করতে দেখে ডাকি। লকডাউনে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান তার স্ত্রী গর্ভবতী। তাৎক্ষণিক-ভাবে হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু গাড়ি নেই কোথাও। তাই গাড়ির খোঁজে হাঁটাহাঁটি করছেন। এরপর আমি নিজের গাড়িতেই তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। সেখানে ভর্তি করানোসহ যাবতীয় ওষুধপত্রও পুলিশই ব্যবস্থা করে দেয়। তিনি আরও বলেন, আমি বিকেলে আবার খোঁজ নিয়েছি। সবাই ভালো আছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) হয়তো আমি দেখতে যেতে পারি।