এম.এইচ মুরাদ:
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের সংখ্যা ও হার বিগত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে, এসময়ে করোনাক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুক্রবার নগরীর সাতটি ল্যাবে ১ হাজার ৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নতুন ১৪৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ নিয়ে টানা ছয় দিন আক্রান্তের সংখ্যা শতক ছাড়িয়ে গেলো। সংক্রমণ হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। নতুনদের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ১৩৫ জন এবং আট উপজেলার ১১ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে মিরসরাই, লোহাগাড়া ও পটিয়ার ২ জন করে এবং রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীর ১ জন করে রয়েছেন। ফলে জেলায় মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ২২ হাজার ৪৮২ জন। এর মধ্যে শহরের ১৬ হাজার ৬৫৪ জন ও বিভিন্ন উপজেলার ৫ হাজার ৮২৮ জন।
শুক্রবার চট্টগ্রামে করোনাক্রান্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। ফলে মৃতের সংখ্যা ৩০৯ জনই রয়েছে। এতে শহরের ২১৫ জন ও গ্রামের ৯৪ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৬ জন। মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা এখন ১৭ হাজার ১২০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৩ হাজার ৩৪৫ জন এবং হোম আইসোলেশেনে থেকে ১৩ হাজার ৭৭৫ জন। হোম আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ৩৫ জন ও ছাড়পত্র নেন ৩৩ জন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ১২৯ জন।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজ সকালে জানান, ‘আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শুক্রবারের সংক্রমণ হার জুন মাসের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। অবশ্য আগের দিন বৃহস্পতিবার সংক্রমণ হার বেশ কিছুটা কম ছিল এবং টানা তিনদিন জেলায় কোনো মৃত্যু নেই।’
সিভিল সার্জন বলেন, ‘যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে এখন মানুষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফার জোর প্রকোপ চলছে। একমাত্র সচেতনতাই পারে আমাদের দেশে দ্বিতীয় ধাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে।’
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, শুক্রবার সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে। এখানে ৩৭৭ জনের নমুনায় ৫৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস থাকার প্রমাণ মেলে। ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ২৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ৮৪টি নমুনার ৬টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ৭৫ জনের মধ্যে ১৬ জন করোনাক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন।
নগরীর বেসরকারি তিন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে ১৫০ নমুনা পরীক্ষা করে ২৯ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৬৩ নমুনায় ২১ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৬ নমুনায় ৪ জন করোনাক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের বিটিআরএলে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। এছাড়া, চট্টগ্রামের কোনো নমুনা এদিন কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে জানা যায়, চমেকে ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বিআইটিআইডি’তে ৩ দশমিক ৮৩, সিভাসু’তে ৬ দশমিক ১৪, চবি’তে ২১ দশমিক ৩৩, শেভরনে ১৯ দশমিক ৩৩, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৩৩ দশমিক ৩৩ এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।