ডা: নুসরাত সুলতানাঃ
প্রথমে আমাদের জানতে হবে কেমিক্যাল পীল কী? কেমিক্যাল পীল হলো একটি এস্থেটিক চিকিৎসা, যা মুখ, হাত এবং ঘাড়ে দাগ, ব্রণ, বলিরেখা নিরাময়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ইতিহাসঃ প্রাচীন মিশরে প্রায় ৫০০০ বছর আগে কেমিক্যাল পীলিং এর ধারণার উৎপত্তি। রাণী ক্লিওপেট্রা টক দই ও দুধ দিয়ে গোসল করতেন। এতে আছে ল্যাকটিক এসিড। এভাবে কেমিকাল বার্ণের মাধ্যমে ত্বকের যত্নের প্রচলন থেকেই পরবর্তীতে জার্মান ডার্মাটোলজিস্টরা ১৮০০ শতকের দিকে কেমিক্যাল পীলিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করেন।
বর্তমানে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যাল পীলের এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে ত্বকটি এক্সফোলিয়েট হয় (সূক্ষ্ম চামড়া উঠে)
একবার কেমিক্যাল পীলের পর ত্বকের নীচে থাকা ত্বকটি আগের তুলনায় অনেক বেশি মসৃণ হয়, নতুন উজ্জ্বলতা দেখা দেয় এবং দাগ ও ব্রণ কমে যায় অনেকাংশে।
এবার দেখা যাক কিসের চিকিৎসায় কেমিক্যাল পীল করানো যায়?
১. বলি রেখা
২. রোদের পোড়া দাগ
৩. ব্রণ বা ব্রণের ক্ষত
৪. মেছতা ও ফ্রেকেলস
৫. অসম ত্বকের বর্ণ বা আনইভেন স্কিন টোন ইত্যাদি।
প্রকারভেদঃ তিনটি বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল পীল আছে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
১. হাল্কা বা সুপারফিশিয়ালঃ আলফা-হাইড্রোক্সি এসিডের মতো স্বল্প মাত্রার এসিড, যা স্বল্প পরিসরে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। এটি কেবল ত্বকের সবচেয়ে বাইরের স্তরে প্রবেশ করে।
২. মিডিয়াম বা মাঝারিঃ যা ত্বকের বাইরের স্তরে পৌঁছায়, যেমন, ট্রাইক্লোরো এসিটিক এসিড বা গ্লাইকোলিক এসিড। ত্বকের কোষগুলি অপসারণের জন্য এটি বেশি কার্যকর।
৩. ডীপ বা গভীরঃ ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের কোষগুলি অপসারণ করতে ত্বকের মধ্য স্তরটিতে পুরোপুরি প্রবেশ করে; এই কেমিক্যাল পীল গুলোতে প্রায়শই ফেনল বা ট্রাইকোলোরো এসিটিক এসিড ব্যবহার করা হয়।
এখন জেনে নিবো কেমিক্যাল পীলিং এর ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?
সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি অস্থায়ী। যেমন: লালভাব, শুষ্কতা, জ্বালা পোড়া এবং সামান্য ফোলা ভাব হতে পারে।
গভীর বা ডীপ কেমিক্যাল পীল দিয়ে আপনি স্থায়ীভাবে ট্যান করার ক্ষমতা হারাতে পারেন।
কেমিক্যাল পীলিং এ অবশ্য আরও মারাত্মক ঝুঁকি এবং বিপজ্জনক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা অনেক সময় স্থায়ী হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
১.ত্বক পুড়ে গিয়ে প্রদাহ হওয়া বা ত্বকের রঙ হালকা সাদা হয়ে যাওয়া। এগুলি কালো বা শ্যাম বর্ণের ত্বকের লোকদের মধ্যে বেশি হতে পারে। এই দাগ স্থায়ী হতে পারে।
২. সংক্রমণ। হার্পিস সিমপ্লেক্সযুক্ত রোগী চিকিৎসার পরে জ্বালা পোড়া অনুভব করতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রেই কেমিক্যাল পীলিং ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
৩. হার্ট, লিভার বা কিডনির ক্ষতি। ডীপ কেমিক্যাল পীলিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ফেনোল আসলে হৃৎপিণ্ডের পেশী, কিডনি এবং লিভারকে ক্ষতি করতে পারে এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ঘটায়।
কেমিক্যাল পীল করার আগে তাই মনে রাখবেন, অবশ্যই তা অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট বা এস্থেটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া করা উচিৎ না।।
পরামর্শেঃ
ডাঃ নুসরাত সুলতানা
ক্লিনিক্যাল,কস্মেটিক ডার্মাটোলজিস্ট এন্ড লেজার স্পেশালিষ্ট।