মাঈন উদ্দীন রুবেল:
বাবা মানে স্নেহ, ভালোবাসায় আগলে রাখার এক মহান ব্যাক্তিত্ব। বাবা মানে হৃদস্পন্দন, আস্থা, নির্ভরতা ও ভালোবাসার শেষ আশ্রয়স্থল।
বাবা ছেলে-মেয়ের জন্য অমূল্য সম্পদ। বাবা নামক বটবৃক্ষ, ছায়া হয়ে পাশে থাকলে মনে হয় যেন বিশ্বটা জয় করা খুবি সহজ। বাবা হচ্ছে একজন ছেলে-মেয়ের উন্নতির শিখড়ে পৌঁছানোর জন্য, আর্থিকভাবে, মানসিকভাবে, প্রেষণামূলকভাবে, সাহস ও উৎসাহ পাওয়ার একটা শক্তি। বাবা এমন একজন মহান পুরুষ যে নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে দিন-রাত পরিশ্রম করে যান। পরিবার ও সন্তান-সন্তুতিদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। হতদরিদ্র বাবা নিজে না খেয়ে ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়, নিজে ভালো জামা-কাপড় না পড়ে ছেলেমেয়েদের পড়ায়।
ছোটবেলায় কোলেপিঠে মানুষ করে তোলার নিরলসস ও অবিশ্রান্ত ব্যাক্তির নাম বাবা। ছেলেমেয়েদের যত আবদার সামর্থ্য অনুযায়ী পূরণ করার চেষ্টা করে। বাবার সমতুল্য বসুন্ধরায় আর কেউ নাই। বাবা এক অতুলনীয় সম্পদ, যার প্রত্যেকটি কথা সন্তান-সন্তুতিদের জন্য উপদেশ ও অমিয় বাণী। বাবা’রা সবসময় ছেলে-মেয়েদের মঙ্গল কামনা করে। বাবা ধনী হোক আর গরীব হোক, সকল বাবার ইচ্ছা থাকে তার ছেলে-মেয়েদের মানুষের মত মানুষ করবে,দেশ,জাতি,এলাকা ও পরিবারের উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রয়োজনে উচ্চ শিক্ষার অর্জনের জন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে আন্তর্জাতিক ভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাঠাবে, এমনও স্বপ্ন বুনে। কিন্তু পার্থক্য এখানেই একজন ধনী বাবা যা পারেন, একজন গরীব বাবার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু বাবা হতদরিদ্র হলেও অন্তত পক্ষে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিটে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাওয়ার নামই বাবা । বাবা’রা এমনই হয় তারা তাদের শেষ সম্বলটা দিয়ে হলেও তাদের ছেলে-মেয়ে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রয়াস করে। ছেলে-মেয়েদের অসুখ হলে মা-বাবার চোখে ঘুম থাকেনা, তারা সুস্থ হয়ে না উঠা পর্যন্ত। বাবা ধনী হোক আর গরিব হোক বাবা পাশে থাকলে আকাশের ন্যায় অসীম সাহস ও মনোবল থাকে। কিন্তু যার বাবা নেই সে বোঝাে বাবা কত বড় অমূল্য সম্পদ ও ভালোবাসার মানুষ । বাবা হারিয়েছি আজ প্রায় দশ বছর, বাবা তার সারাটি জীবন পার করে গেছেন ছেলে-মেয়েদের তরে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে। আজ বাবাকে খাওয়াতে চাইলে বাবা নেই। বাড়িতে গেলে পুত বলে জড়িয়ে ধরার একজন নেই। বাবা বলে ডাকবো সেই শব্দটাও বাদ পড়ে গেল।
প্রতিদিন,প্রতিরাত বাবার কথা মনে পড়ে। ছোটবেলায় একটু অসুস্থ হলে বাবা তার কাঁধে করে নিয়ে যেতো ডাক্তারের নিকট,রাত-দিন দেখতো না। কোনো রকম মান-অভিমান হলে, বাবা জড়িয়ে ধরলে সকল অশান্তি ও চিন্তা দূর হয়ে যেতো। প্রত্যেকটা ভালো কাজে সাহস যোগাতো। বাবা পরিবারের এক অপূরনীয় ক্ষতি ও মূল খুঁটি। যার শূন্যতা কখনো পূরণ হয় না। বাবার বলা কিছু মহামূল্যবান কথা আজো মনে পড়ে, “খেলায় মজিয়া শিশু কাঁটায়ও না বেলা, সময়ের প্রতি কভু করিও না হেলা”,। নদী কভু পান নাহি নিজ নিজ জল, তুরুগন নাহি খাই নিজ নিজ ফল” এমন বাক্যগুলো আজো অন্তরের কালিতে লিখা আছে। বাবা হারানোর ব্যথা আজো ভোলার নয়।
প্রতি মূহুর্তে বাবার কথা মনে পড়ে, তার উপদেশমূলক কথাগুলো বারবার হৃদয়ে নাড়া দেয়। বাবা শব্দটা বলে ডাকা আর সম্ভব নয়। চিরতরের জন্য পরপারে পাড়ি জমালো। আজ বাবা দিবসে বাবাকে খুব মনে পড়ে। আল্লাহ বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক।
সর্বোপরি বলছি, বাবা যেন শেষ বয়সে কারো বোঝা না হয়। তার জীবন-যৌবন দিয়ে যে ছেলেয়েদের লালন পালনে কাটিয়ে দেয়। তার শেষ বয়সে যেন শেষ আশ্রয়স্থলটা পরিবারেই হয়, কোনো বৃদাশ্রম যেন না হয়। পৃথিবীর সকল বাবা ভালো থাকুক, বাবা দিবসে সকল বাবার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সালাম ।