মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাম শুনলেই জিবে জল আনে চট্টগ্রামের মেজবান!!


প্রকাশের সময় :১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ৫:১৭ : পূর্বাহ্ণ

এম.এইচ মুরাদ:

মেজবান বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যবাহী একটি অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামের ভাষায় একে বলা হয় ‘মেজ্জান’। মেজবান ফারসি শব্দ। এর অর্থ নিমন্ত্রণকর্তা। মেজবানের উৎপত্তির সঠিক সময় নির্ণয় করা যায় না।

১৫০০ ও ১৬০০ শতাব্দীর প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যে মেজোয়ানি ও মেজমান শব্দ দুটি পাওয়া যায়। মেজোয়ানি অর্থ আপ্যায়নকারী ও মেজমান অর্থ আপ্যায়ন। হয়তো সে সময়ের মেজমান, বর্তমানে মেজবানে রূপ নিয়েছে।

আর এই মেজবানের নাম শুনলেই জল আসে জিভে। শুধু কি তাই, পেটেও হাত পওে নিজের অজান্তে। এমনকি মনে পড়ে সেই মেজবানি স্বাদের খাবারের ঢেকুর।

বর্তমানের সাথে অতীতের মেজবান অনুষ্ঠানের কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পূর্বে মাটিতে চাটাই বিছিয়ে ও মাটির সানকিতে মেহমানদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হত। বর্তমানে টেবিল চেয়ার ও সাধারণভাবে প্রচলিত থালায় খাওয়ার আয়োজন করা হয়।

মেজবানের রান্নার রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। মূল পদ গরুর মাংস হলেও এই মাংস রান্নার ধরন আলাদা। মসলাও ভিন্ন। শুধু তা-ই নয়, রান্নার ডেকচি থেকে শুরু করে চুলা পর্যন্ত আলাদা। এই কাজে দক্ষ চট্টগ্রামের বাবুর্চিরাও। বংশ পরম্পরায় তাঁরা এই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

সাধারণত দুটি কারনে চট্টগ্রামে মেজবান হয়। একটি সুখ, মানে খুশি। আরেকটি শোক, মানে অনুতাপ। যেমন কারো মৃত্যুর পর কুলখানি, চেহলাম, মৃত্যুবার্ষিকী, যাতে থাকে সম্পূর্ণ ছওয়াবের উদ্দেশ্য। শিশুর জন্মের পর আকিকা উপলক্ষেও মেজবান আয়োজন করা হয়।

এছাড়া নির্দিষ্ট উপলক্ষ ছাড়া বা কোনো শুভ ঘটনার জন্যও মেজবান করা হয়। তবে ৮০ দশকের পর থেকে রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এ মেজবান।

এর আগে আত্মীয়, পাড়া-পড়শী, বন্ধুবান্ধব ও গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন হত। বর্তমানের মেজবান অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক চিত্ত আর গাড়িওয়ালা বিত্তবানদের পদচারণা বেশি। গরিব-দু:খি মানুষের সেখানে খোঁযে পাওয়া মুশকিল।

মেজবানের মূল খাবারের তালিকায় থাকে গরুর মাংস ও সাদা ভাত। সঙ্গে ছোলার ডাল, গরুর হাড় দিয়ে ঝোল রান্না। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিয়ে কিংবা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত খাবার সাধারণত একবারের বেশি দেয়া না হলেও মেজবানে অতিথির চাহিদা অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হয়। অর্থাৎ ইচ্ছেমতো মাংস কিংবা আহার গ্রহণ।

বিশেষ কায়দায় অঞ্চলের বাবুর্চিরা মেজবানের গরুর মাংস রান্না করেন। দেশী-বিদেশী মসলার পাশাপাশি স্থানীয় হাটহাজারী অঞ্চলের বিশেষ ধরনের শুকনা লাল মরিচ ব্যবহারের ফলে মাংসের স্বাদ অতুলনীয় যেকোনো ভোজনরসিকের কাছে।

শুকনা এ মরিচে ঝাল কম। দাম অন্যান্য মরিচের চেয়ে বেশি। মেজবান অনুষ্ঠানে এর চাহিদাই দামে হেরফেরের মূল কারণ।
মেজবানির দাওয়াত সবার জন্য উন্মুক্ত। গ্রামা অঞ্চলে কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তি মেজবানির আয়োজন করলে লোকের মাধ্যমে সেই ভোজের দাওয়াত বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আগে ঢোল পিটিয়ে মেজবানের দাওয়াত দেয়ার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল।

গরুর মাংসের জন্য আদিকাল থেকেই চট্টগ্রাম প্রসিদ্ধ। এখানকার লাল গরু (রেড ক্যাটল অব চিটাগাং) সবচেয়ে উন্নত দেশী গরুর জাত। মূলত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশসহ সমুদ্রতীরবর্তী অ লে এ গরু উৎপাদন হয় বেশি। দেখতে সুন্দর এ গরু আকারে ছোট হলেও মাংস সুস্বাদু, পুষ্টিকর। মেজবানে মূলত লাল গরুর ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি।

চট্টগ্রামের মানুষ গরুর মাংস কতটা পছন্দ করেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় কথিত একটি ঘটনা থেকে। জনৈক এক ব্যক্তি তার নিকটাত্মীয়কে নিয়ে ভারতে গেছেন হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে। ওখানে বাঙালি ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বাড়ি কোথায়? যথারীতি উত্তর বাংলাদেশ। ডাক্তার বললেন, কোন জেলার বাসিন্দা আপনারা? উত্তর শুনে ডাক্তার স্মিত হেসে বললেন, আমি জানতাম, তাই আপনাকে প্রশ্ন করার আগেই বাংলাদেশ ছাড়াও চট্টগ্রাম নামটি লিখে রেখেছি।

পরে কথাচ্ছলে ডাক্তার জানালেন, ভারতে বাংলাদেশী যত মানুষের হৃদরোগের চিকিৎসা বা অপারেশন হয়, এর সিংহভাগই আসে চট্টগ্রাম থেকে। অধিক পরিমাণে গরুর মাংস খাওয়ার কারণেই এ জায়গার মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

কথিত আছে, সারা দেশে একদিনে যে পরিমাণ গরু জবাই হয়, ঠিক সমপরিমাণ হয় চট্টগ্রামে। বয়স্কদের হৃদরোগের বিষয়ে সচেতন করা হলে মেজবান সম্পর্কে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, হায়াত মউত, আল্লার হাতত, মেজ্জান খাইয়ুম, মরি যাইয়ুম; তো কি হইয়ে। (জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। মেজবান খাব, মরলে মরব; তাতে কী?)।

চট্টগ্রামের একজন সংবাদকর্মী সেলিম। সাংবাদিকতার সুবাধে তার সাথে পথচলা। মাঝে মধ্যে তিনি বলতেন, গরুর মাংস যে খাইনি সে জীবনে কিছুই পায়নি। বিশেষ করে মেজবানের মাংসের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল অন্যরকম।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েকজন ইতিহাসবিদের মতে, শতবর্ষের পরিক্রমায় মেজবান শব্দটার অর্থে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে মেজবান মানে হচ্ছে, বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আপ্যায়নের ব্যবস্থা।

অর্থাৎ সামর্থ যা-ই থাকুক না কেন, ধনী-গরীব যে-ই মেজবানের আয়োজন করবে তার অতিথির সংখ্যা নিরূপণ করা চলবে না। অর্থাৎ অতিথির সংখ্যা গুনে মেজবানের আয়োজন সম্ভব নয়। যত অতিথি আসবে এবং যে পরিমাণ খেতে চাইবে ততটুকু পরিবেশন করাই হলো পরিপূর্ণ মেজবানের বৈশিষ্ট্য।

চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণারত এক গবেষক জানান, দশ শতকের পর চট্টগ্রাম ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত। বন্দর কেন্দ্র করে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচনা হয় তখন থেকেই। পর্তুগিজ ছাড়াও আরব কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মুসলিম মনীষী এ জায়গায় আসতে থাকেন।

বায়েজিদ বোস্তামি, বদর শাহদের পাশাপাশি বার আউলিয়া চট্টগ্রামে এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেন বিভিন্ন সময়ে। ধর্মপ্রচারকরা পরিবর্তিত কমিউনিটিকে নতুন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে পরিচিত করাতে মেজবান বা গরুর মাংসের মাধ্যমে ভোজের আয়োজন শুরু করেন। এবং তখন থেকে মেজবানের প্রচলন হয় বলে ধারনা করা হয়।

ট্যাগ :