এম.এইচ মুরাদঃ
কাকতালীয় হলেও ইতিহাসে পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে গত ৩শ বছরের প্রতি শতকের ২০ সালেই ঘটে গেছে একেকটা মহামারি, যে মহামারিতে প্রাণহানি হয় অসংখ্য মানুষের। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে এমন একটি ইনফোগ্রাফিক ভাইরাল হয়েছে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১৭৬টি দেশের ২ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ হাজার মানুষের। বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টিনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবহন সেবা বন্ধ এবং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কারও বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই । কিন্তু এর শেষ কোথায়?
ইনফোগ্রাফিকটিতে দাবি করা হয়, প্রতি ১০০ বছর অন্তর ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে ২০২০ সালের নোভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মিল রয়েছে। করোনাভাইরাসও কি ‘বিশে নেমে আসা বিষ’,। চলুন ঘুরে আসি ইতিহাসের পাতা থেকে।
১৭২০ সালে প্লেগ
ইউরোপের সমাজ কাঠামো ভেঙে দিয়েছিল প্লেগ। ১৭২০ সাল থেকে পরবর্তী ২ বছরে গ্রেট প্লেগ অব মার্সেইতে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ফ্রান্সে শুধু মার্সেই শহরে মারা যান ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। ফ্রান্সের জন্মহার প্রায় ৪৫ বছরের জন্য কমে গিয়েছিল এই প্লেগের প্রভাবে। মধ্যযুগীয় ইতিহাস গবেষক ফিলিপ ডেইলিভার তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের ৪৫-৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়,যা প্রায় ২০ কোটি।
১৮২০ সালে কলেরা
১৮০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে কলেরা শুরু হয়। এটি অতি মহামারি আকার ধারণ করে ১৮১৭ সালে। ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এর প্রভাব থাকলেও ১৮২০ সালে তা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করে।
২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। এশিয়াটিক কলেরা নামে পরিচিত এই অতি মহামারি শুরু হয় কলকাতার ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে। পরে তা প্রায় অর্ধেক বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এই মহামারিতে কত লাখ লোক মারা গিয়েছিলেন তা পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ব্যাংককেই মারা গিয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
১৯২০ সালে স্প্যানিস ফ্লু
স্প্যানিশ ফ্লু নামে নতুন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ কানসাসের আমেরিকান সেনা সদস্যদের মধ্যে। পরে ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করলো সেই জ্বর। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এই মরণব্যাধি। পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে প্রাণহানি হয় কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষের।
ফ্যাক্ট চেক
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া এই পরিসংখ্যানের ফ্যাক্ট চেক করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। কোভিড-১৯ রোগটি প্রতি শতকের ২০ সালে মহামারির সঙ্গে মিল থাকার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ভাইরাল প্রাদুর্ভাবের যে ইনফোগ্রাফিক ছড়িয়ে পড়েছে তার সাল-তারিখ ও বৈশিষ্ট্যে ভ্রান্তি রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্দিষ্ট ভাইরাস মৌসুমী হলেও এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই যে প্রতি শতাব্দীতে একবার ভাইরাল মহামারি ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘কিছু রোগের মহামারি বারবার ঘটে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি একটি অজ্ঞাত এবং সম্পূর্ণ নতুন রোগ।’