এম.এইচ মুরাদ:
কৃষিঋণ বিতরণে গতি আসেনি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৩০৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রায় অর্ধেক সময়ে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তার পরিমাণ তিন ভাগের এক ভাগ। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সরকার কৃষিঋণকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ব্যাংক ঋণের শতকরা ২ ভাগ কৃষিখাতে দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। শুধু ঋণ বিতরণই নয়, পল্লী তথা গ্রামাঞ্চলের মানুষের ব্যাংকসেবা নিশ্চিতেও সরকার যথেষ্ট যত্নবান, ব্যাংকের শাখা খোলার ক্ষেত্রে যাতে গ্রামগঞ্জ অবহেলিত না থাকে সে ব্যাপারেও সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশে কৃষিঋণ বিতরণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কৃষিপণ্য তথা ফসলের ওপরই নির্ভর করে দেশের খাদ্য সরবরাহ ও নিরাপত্তার বিষয়টি। এক সময় কৃষিঋণ পেতে কৃষকদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হতো, গ্রামের প্রান্তিক মানুষ যারা ‘ধারকর্জ’ করতেও ভয় পান তাদের কাছে ব্যাংকের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি আরো ভয়ের বিষয় ছিল। আবার দেখা গেছে, কৃষিঋণের টাকা ফেরত নিতেও ব্যাংকগুলো অনেক কঠোর আচরণ করতো। সে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কৃষকরা এখন ঋণ নেওয়াকে তাদের অধিকার বলে বুঝতে পারছেন। তাই তারা ব্যাংকে যান এবং ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে তাদের সাথে কথাবার্তা বলেন ও বোঝার চেষ্টা করেন। সুযোগ-সুবিধা আর শর্তে মিললে তারা অনেকে ঋণ নেন।
তবে কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সব সময়ই একটা অভিযোগ আছে তা হচ্ছে এই ঋণের কতটা আসলেই কৃষক পান? কৃষিঋণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়টিকে যদি আলাদা করা হয় বা বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে প্রকৃত কৃষক যারা সত্যিকার অর্থেই কৃষিকাজে ঋণের টাকাটা খরচ করবেন তারাই ঋণ পেতেন। এতে দু’ভাবে লাভ হতো। প্রথমত: একেবারে প্রান্তিক কৃষক ঋণ পাওয়ায় অর্থের প্রবাহ তৃণমূল পর্যন্ত যেত, দ্বিতীয়ত: প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক যখন টাকাটা কৃষিকাজেই ব্যবহার করবেন তখন তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিকাজে তথা ফসল ও ফল উৎপাদনে।
কৃষিঋণ বিতরণে এসব বিষয় সরকার, মন্ত্রণালয় ও ব্যাংকগুলোর বিবেচনায় আছে বলেই আমাদের বিশ্বাস, তবে যদি না থাকে তাহলে তাদের প্রচলিত ঋণপ্রদান নীতিমালা নিয়ে ভাবতে হবে এবং আরো বেশি ক্ষুদ্র কৃষকবান্ধব ঋণব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।