স্টাফ রিপোর্টার:
পর্যাপ্ত উড়োজাহাজ না থাকায় গত কয়েক মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কয়েকটি রুটের ফ্লাইট কমাতে বাধ্য হয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। বন্ধও রয়েছে কয়েকটি রুট। অন্যদিকে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রিজেন্টের যাত্রী পরিবহন না করতে গত মাসে সব স্টেশনে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমানের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগ থেকে পাঠানো ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ইন্টারাপশান মেনিফেস্ট (এফআইএম) গ্রহণ না করতে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা মানার ব্যপারেও বলা হয়েছে। এমনকি অতীতে এফআইএম চুক্তির আওতায় কোনো যাত্রী পরিবহন করে থাকলে সে বাবদ বকেয়া রয়েছে কিনা জানাতে স্টেশনগুলোর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে বিমানের বিপণন বিভাগ।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কান্ট্রি ম্যানেজার নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এফআইএম হচ্ছে দুটি এয়ারলাইনসের মধ্যে সংঘটিত যাত্রী পরিবহন করার একটি চুক্তি। এ চুক্তির আওতায় কোনো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিল হলে তার যাত্রীদের অন্য এয়ারলাইন্সটি পরিবহন করবে।
তিনি বলেন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কোনো যাত্রী এখন আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বহন করছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিমানের প্রতিটি স্টেশনের মতো আমরাও ওই নির্দেশনা মতে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সাথে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।
তবে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেয়া এ সিদ্ধান্তকে অন্যায্য ও আইনানুগ নয় বলে মনে করছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই নির্দেশনা যৌক্তিক নয়। মেইনটেনেন্সের কারণে কয়েকটি এয়ারক্রাফট অপারেশনের নেই। সঙ্গত কারণে ফ্রিকুয়েন্সি কমানো হয়েছে। এখন কেউ যদি মনে করেন রিজেন্ট এয়ারওয়েজ শাটডাউন (বন্ধ) করতেছে, এটি একান্তই তাদের নিজস্ব ভাবনার বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের সঙ্গে এফআইএম চুক্তি হয়েছে আয়াটার (ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন) মাধ্যমে। এফআইএম বিল এয়ারলাইন্সগুলো একে অপরের থেকে সরাসরি নেয় না। আয়াটার ক্লিয়ারিং হাউজের মাধ্যমেই বিল পেমেন্ট হয়। আয়াটা থেকে রিজেন্টের বিষয়ে সতর্ক করে কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় বিমান কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত দুখঃজনক।’
জানা গেছে, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বহরে ৪টি বোয়িং ৭৩৭- ৮০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি উড়োজাহাজের সী-চেক (বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ) করার সময় চলে আসে। ইতোমধ্যেই একটি উড়োজাহাজের সী-চেক সম্পন্ন হয়েছে। আরেকটি উড়োজাহাজ সী-চেকের জন্য পাঠানো হবে আগামী জানুয়ারির শেষের দিকে। এজন্য এয়ারলাইনটিকে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে কিছু দিন আগে হঠাৎ করে ২টি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বসে যায়। বহরে উড্ডয়ন সক্ষম উড়োজাহাজ কমে যাওয়ায় ফ্লাইট সংখ্যাও কমে আনতে বাধ্য হয় তারা।
বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এখন আর রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কোনো টিকেট বিক্রি করছে না। সীমিত করা হয়েছে দোহা, মাস্কাট, কুয়ালালামপুর ও কলকাতা রুটের ফ্লাইটও। এদিকে উড়োজাহাজ সঙ্কটে অনেক আগে থেকেই দেশের অভ্যন্তরে ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-সৈয়দপুর রুটের ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে এয়ারলাইন্সটি। অভ্যন্তরীণ রুটের উপযোগী নতুন উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ রুট দুটি চালুর সম্ভবনাও নেই। অভ্যন্তরীণ রুটের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের সপ্তাহে চালানো হচ্ছে মাত্র ৩টি ফ্লাইট। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ফ্লাইটগুলো চলছে মূলত মধ্যপ্রাচ্য রুটের কানেক্টিং ফ্লাইট হিসেবে।
উড়োজাহাজের পাশাপাশি অনেক আগে থেকেই রিজেন্ট এয়ারওয়েজে বড় ধরনের আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্সটিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে সাতশর বেশি জনবল রয়েছে। এর মধ্যে বৈমানিক রয়েছেন প্রায় ৫০ জন। অর্থ সঙ্কটের কারণে এসব বেতন-ভাতা পরিশোধে প্রায় সমস্যায় পড়ে এয়ারলাইন্সটি।
আর্থিক সঙ্কট প্রসঙ্গে ইমরান আসিফ বলেন, ‘দুটো উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বসে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যাহত হয়েছে। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যেই এসব সমাধান হয়ে যাবে। ১৬ ডিসেম্বর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন মেরামতের জন্য ইন্দোনেশিয়া পাঠানো হবে, যা জানুয়ারির মাঝামাঝি চলে আসবে। আর জানুয়ারির শেষ নাগাদ আরেকটি উড়োজাহাজ সী-চেকের জন্য পাঠানো হবে। যেটি ফেব্রুয়ারির মধ্যে বহরে যুক্ত হবে। উড়োজাহাজগুলো বহরে আসলেই কমিয়ে আনা ফ্লাইটগুলো আবার শুরু করা হবে।’