স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনায় অনলাইনে ক্লাস শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে তেমন সাড়া মিলছে না। কারণ হিসেবে তারা ইন্টারনেটের চড়া মূল্য ও দুর্বল নেটওয়ার্কের কথা বলছেন। করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর দ্বারা মোবাইলে ডাটা কিনে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাছাড়া করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীও টিউশনি হারিয়েছেন। ফলে তারা অনেকটা আর্থিক সংকটে ভুগছেন।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করে। এ কার্যক্রম অনেকটা সফল হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে ইন্টারনেটের চড়া মূল্য ও দুর্বল নেটওয়ার্কে।
দেশের বিভিন্ন সিম কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। টেলিটক সিমের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, ৩০ দিন মেয়াদি ৩ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ১৩৯ টাকা, ৫ জিবি ২০১ টাকা, ১০ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ৩০১ টাকা। গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ৩০ দিন মেয়াদি ১ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ১৮৯ টাকা, ৩ জিবির মূল্য ২৮৯ টাকা, ৮ জিবি ৩৯৯ টাকা, ১২ জিবি ৪৯৮ টাকা। রবির ১.৫ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ২০৯ টাকা যার মেয়াদ ৩০ দিন। আবার ২৮ দিন মেয়াদের ২ জিবির মূল্য ২৪৯ টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি ১০ জিবির মূল্য ৫০১ টাকা।
এ প্যাকেজটির মেয়াদ কম হওয়ায় তেমন কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। বাংলালিংক গ্রাহকদের ৩০ দিন মেয়াদি প্রতি ২ জিবির জন্য ১৮৯ টাকা পরিশোধ করতে হয়। ৩ জিবির জন্য ২৪৯ টাকা, ৮ জিবির জন্য ৩৯৯ টাকা আর ১২ জিবির জন্য ৪৯৮ টাকা গুণতে হয়। তাছাড়া এয়ারটেলের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৩০ দিন মেয়াদি ২ জিবির জন্য ২২৯ টাকা গুণতে হয়। ৩০ দিন মেয়াদি ৭ জিবির জন্য ৪৯৮ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নেটওয়ার্ক দুর্বল বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওসমান গনী বলেন, ৪ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ। সম্প্রতি অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সেটা আমাদের জন্য কার্যকর হচ্ছে না। আমাদের অনলাইন ক্লাসে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই উপস্থিত থাকতে পারছেন না। কারণ ইন্টারনেটের দাম অনেক বেশি। এত দাম দিয়ে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করার সামর্থ্য নেই অনেকের। বিনামূল্যে ইটারনেটের ব্যবস্থা করলে অনলাইন ক্লাসের সুফল পাওয়া যাবে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, অনলাইন ক্লাস কার্যকরভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
করোনার কারণে ঢাকা ছেড়েছে। গ্রামের দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি না। এসব ক্লাস না করতে পেরে পিছিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওবায়দুল বলেন, কয়েকটা টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতাম। করোনার প্রভাবে আমার সব টিউশন হারিয়েছি। এখন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছি। এমন অবস্থায় উচ্চমূল্যে ডাটা কিনে আমার পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে অথবা কমমূল্যে ডাটার ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো।
এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক ইব্রাহিম আহসান বলেন, কিছু সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাসের ফল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। ইন্টারনেটের চড়া দাম একটি বড় সমস্যা। শিক্ষার্থীদের সবার অনলাইনে ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইসও নেই। ছুটির কারণে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সব জায়গায় মোবাইল ইন্টারনেট গতিশীল নয়, শিক্ষকদের অনেকেরই অনলাইন ক্লাস নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি, শিক্ষকরা নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত না করলে অনলাইন ক্লাস ফলপ্রসূ হবে না।