এম.এইচ মুরাদ:
আপনি আপনার প্রাইভেসি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত অথবা অন্য কোন কারনে আপনি গুগলের সার্ভিসগুলো ইউজ করা একেবারে বন্ধ করে দিতে চান এবং গুগলকে আপনার অনলাইন লাইফ থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলতে চান। যদি সত্যিই মুছে ফেলতে চান তাহলে কিভাবে করতে হবে জানেন? আর এটা কি জানেন যে গুগলকে সম্পূর্ণভাবে আমাদের অনলাইন জীবন থেকে মুছে দেওয়া প্রায় অসম্ভব? কিভাবে অসম্ভব? তা জানা যাবে এ লেখা থেকে।
গুগল সার্চ রিপ্লেসমেন্ট:
আপনি আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিতে পারেন। তবুও আপনাকে সর্বপ্রথম যা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে তা হচ্ছে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের একটি রিপ্লেসমেন্ট খোঁজা যেটিকে আপনি গুগলের পরিবর্তে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গুগলের সার্চ ইঞ্জিনটি হচ্ছে এখনও পর্যন্ত গুগলের প্রধান এবং সবথেকে বেশি ব্যবহার করা সার্ভিস। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমরা গুগল সার্চের ওপরে এতটাই নির্ভরশীল যে আমরা অনেকেই গুগল সার্চ ছাড়া আর কোন সার্চ ইঞ্জিন চিনিই না। আমরা অনেকেই জানি Bing , Yahoo এবং DuckDuckGo নামে আরও কয়েকটি জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন আছে। তবে এগুলোর কোনটাই কখনোই গুগলের মতো এত জনপ্রিয় এবং এত বেশি রিলায়েবল ছিলনা এবং এখনও নেই।
গুগল সার্চের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যদি কিছু ব্যাবহারই করতে হয়, তবে গুগলের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে সবথেকে কাছাকাছি যে সার্চ ইঞ্জিনটি আসতে পারে তা হচ্ছে DuckDuckGo। এই সার্চ ইঞ্জিনটি মুলত নিজেকে নিজেই অ্যান্টি-গুগল হিসেবে ঘোষণা করে। যেমন, এই সার্চ ইঞ্জিনটি আপনাকে ট্র্যাক করবে না কখনোই যেমনটা গুগল সবসময়ই করে আসছে।
গুগল ক্রোম রিপ্লেসমেন্ট:
এটাও আরেকটি হার্ড ডিসিশন। গুগল ক্রোম সম্পর্কে বলার কিছু নেই। আমরা প্রায় সবাই গুগল ক্রোমকে আমাদের ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার করি। আমাদের পিসিতে এবং স্মার্টফোনে দুই জায়গাতেই গুগল ক্রোম প্রাইমারিলি ব্যবহার করে অধিকাংশ ইউজার। প্রথম অধিকাংশ ইউজার গুগল ক্রোম ভালো না লাগলেও ক্রোমকে বাদ দিতে পারেন না ক্রোমের সহজ ইউআই, গুগলের সাথে ডিপ ইন্টাগ্রেশন এবং অনেকটা অভ্যাসের কারণে। গুগলের থেকে অনেক ভালো ব্রাউজার তৈরি হলেও অধিকাংশ ইউজার অভ্যাসের কারনে ক্রোমকে বাদ দিতে পারেন না। তবে গুগলকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে চাইলে গুগল ক্রোম ব্রাউজারেরও একটি রিপ্লেসমেন্ট দরকার হবে আপনার।
এখন আপনি যতগুলো জনপ্রিয় ব্রাউজার দেখবেন, তার মধ্যে অধিকাংশই ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের ওপর তৈরি। অর্থাত্ সেগুলোর সাথে গুগল ক্রোমের খুব একটা ডিফারেন্স নেই। যদি গুগলকে বাদ দেওয়া বলতে যতকিছুর সাথে গুগলের বা গুগলের কোন প্রোডাক্টের সম্পর্ক আছে সবকিছুই বাদ দিতে চান, তাহলে হয়তো আপনি ক্রোমিয়াম বেজড কোন ব্রাউজারও ইউজ করতে চাইবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে সম্পূর্ণ একটি নতুন প্লাটফর্মে মুভ করতে হবে। যেমন- মাইক্রোসফট এজ অথবা মজিলা ফায়ারফক্স। মাইক্রোসফট এজ ব্যবহার করার তো প্রশ্নই আসেনা, সঙ্গত কারনেই।
জিমেইল রিপ্লেসমেন্ট:
আমি যখন কাউকে তার ইমেইল অ্যাড্রেস জিজ্ঞাসা করি এবং সে যখন একটি ইয়াহু ইমেইল অ্যাড্রেস দেয়, তখন আমি আক্ষরিক অর্থেই তার দিকে ৫ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকি এটা বোঝার জন্য যে, এমন মানুষও এখনো আছে। সত্যি বলতে, জিমেইল ছাড়া অন্য কোন ইমেইল আমার মতো বা আপনার মতো অধিকাংশ মানুষের কাছেই স্ট্যান্ডার্ড মনে হয়না। যদিও ইমেইলের দিক থেকে মাইক্রোসফটের আউটলুক অনেক ভালো, কিন্তু জিমেইলের সাথে তুলনা করার মতো নয়। এর কারন হচ্ছে, গুগলের অন্যান্য প্রোডাক্ট যেমন গুগল কিপ, গুগল ক্যালেন্ডার ইত্যাদির সাথে জিমেইলের ডিপ ইন্টাগ্রেশন। এর আরো একটি কারন হচ্ছে, প্রত্যেকটি গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে জিমেইল অ্যাকাউন্ট ডিফল্টভাবে থাকেই। আলাদা করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার দরকার হয়না। তাই যাদের গুগল অ্যাকাউন্ট আছে, তারা জিমেইল ছাড়া অন্য কোন ইমেইল প্রাইমারিলি বাবহার করেন না। তবে গুগলের এর ইকোসিস্টেম থেকে বের হতে হলে আপনাকে জিমেইল ব্যবহার করাও বন্ধ করতে হবে। এর জন্য আপনাকে অন্য কোন ইমেইলে মুভ করতে হবে। যেমন- ইয়াহু, আউটলুক এবং আরও অন্য কোন ইমেইল প্রোভাইডার।
ইউটিউব রিপ্লেসমেন্ট:
ইউটিউএটা আপনি পারবেন না। সত্যিকার অর্থেই ইউটিউবের মতো ভালো এবং এত বড় কোন ভিডিও প্লাটফর্ম আর একটাও নেই। ভিজটরের কথা তো বাদ দিলাম, আপনি যদি একজন ক্রিয়েটরও হয়ে থাকেন, তাহলেও আপনার ভিডিও পাবলিশ করার জন্য ইউটিউবের থেকে পারফেক্ট জায়গা আর একটাও নেই। অডিয়েন্স বলুন, রেভিনিউ বলুন আর জনপ্রিয়টা বলুন, কোনদিক থেকেই ভিডিও পাবলিশ করার জন্য ইউটিউবের মতো আর কিছুই নেই।
হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন যে ভিডিও প্লাটফর্ম হিসেবে ঠরসবড় অনেক ভালো। তবে সত্যি কথা বলতে এটি ইউটিউবের ধারে-কাছেও কম্পেয়ারেবল কিছু না। ঠরসবড় তে আপনি নিজের ভিডিও হোস্ট করতে পারবেন ঠিকই, তবে আপনার টারগেটেড অডিয়েন্স খুব কম পাবেন এখানে। ঠরসবড় প্লাটফর্মটি বিশেষভাবে ফিল্মমেকার এবং ভিডিওগ্রাফারদের টার্গেট করেই তৈরি করা। ইউটিউবের মতো এত বড় ফ্যান বেস আর কোথাও পাবেন না, অন্তত ভিডিওর ক্ষেত্রে।
তাই আপনি ইউটিউবের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ঠরসবড় ব্যবহার করতেই পারেন, তবে সেটি ইউটিউবের মতো কখনোই হবেনা। তবে গুগলের সব সার্ভিসের মধ্যে ইউটিউব অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। তাই গুগলের ইকোসিস্টেম থেকে সম্পূর্ণভাবে বের হতে হলে ইউটিউবকেও স্যাক্রিফাইস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।