মোঃ জানে আলম জনি:
কাস্টমস নিলাম থেকে অনেকেই জাপানের রিকন্ডিশনড্ গাড়ি কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন। অনেক আমাদের কাছে ব্যক্তি হিসেবে নিলামে গাড়ি কেনার উপায় জানতে চেয়েছেন। আমরা কিছুদিন সময় নিয়ে আপনাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছি। জ্বি, চাইলে আপনিও মংলা কাস্টম হাউসের নিলামে তোলা এই ২৫৬টির এক বা একাধিক গাড়ি কিনতে পারেন। এজন্যে বিশেষ কোন যোগ্যতার দরকার নেই। দরকার নেই ট্রেড লাইসেন্স, আইআরসি, ইআরসি, ভ্যাট সনদ বা অন্য কোন কাগজপত্র।
ব্যক্তি পর্যায়ে নিলাম নিয়ে সংশয় জড়তা কাটাতে আমাদের এ চেষ্টা। নিলামে আপনি অংশ নিতে হলে কেবল একটা আয়কর সনদ থাকতে হবে। এটা এআইটি জমা দেয়ার জন্য ও পরে গাড়ি রেজিস্ট্রশনের জন্য এমনিতেই লাগবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলামে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। মংলায় সেটা এখনো পর্যন্ত চায়নি।
চট করে দেখে নিন নিলামে গাড়ি কিনতে আপনাকে কী করতে হবে:
যে কাস্টম হাউস বা স্টেশন থেকে থেকে নিলামে গাড়ি বা পণ্য কিনবেন সেখানকার ক্যাটালগ (লটভিত্তিক গাড়ির তালিকা) কিনবেন। সংযুক্তিতে ২৫৬টির গাড়ির ক্যাটালগ রয়েছে। এটা সরকারী নিলামকারীর কাছে থাকে। সব কাস্টমস অফিসে একজন নিলামকারী থাকেন। ক্যাটালগের দাম ৫০-১০০ টাকা হতে পারে। আপনাকে নিলামে অংশ নেয়ার সরকারী নিলামকারীর কাছ থেকে সিডিউল কিনতে হবে (প্রতি লটের জন্য একটা শিডিউল কিনতে হয়)। তিনটা গাড়ির জন্য বিড করলে তিনটা শিডিউল কিনতে হবে। শিডিউলের দাম ১০০-২০০ টাকা হতে পারে।
সিডিউলে বর্ণিত ফিল্ডের তথ্যগুলো স্পষ্ট করে বাংলায় পূরণ করতে/লিখতে হবে। যে লটটি কিনতে চান, সেটি ক্যাটালগের কত নম্বর সেটা পণ্যের বর্ননাসহ উল্লেখ করতে হবে। আপনি যে লটটি যত মূল্যে বিড করতে চান সে কোটেশন মূল্যের উপর ১০% হারে জামানত পেঅর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট শিডিউলের সাথে জমা দিতে হবে। সিডিউলে পণ্যের মূল্য অংকে ও কথায় স্পষ্টাক্ষরে লিখতে হবে। বিডের সাথে অবশ্যই আয়কর সনদপত্র জমা দেবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রও (ঐচ্ছিক) জমা দিতে পারেন। কাস্টম হাউসগুলোতে সচরাচর প্রতি মাসে একবার নিলাম করা হয় (পঁচনশীল নাহলে, গাড়ি পঁচনশীল নয়)।
মনে রাখতে হবে, আপনাকে শিডিউল জমার নির্ধারিত দিনক্ষণে বিড বা দর প্রস্তাব জমা দিতে হবে। দিনক্ষণ শিডিউল কেনার সময় নিলামকারীর কাছ থেকে জানতে পারবেন। আপনি আপনার পছন্দের লটটির সর্বোচ্চ দরদাতা হলে এবং আপনার দেয়া দর প্রথম নিলামে এই গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্যের (সাধারণত ডিউটি পেইড ভ্যালু) ৬০% হলে, দ্বিতীয় নিলামের দর প্রথম নিলাম থেকে বেশী হলে, তৃতীয় নিলামে যা-ই দর উঠুক ওই মূল্যে বিক্রি করে দেয়া হবে। বলাবাহুল্য, নিলামের উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বা বৃদ্ধি নয় বরং পোর্টের গুদাম বা জায়গা খালি করা।
বিডমূল্য দেয়ার ক্ষেত্রে টিপস: তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বা কারো কথায় পড়ে নিলামে দর দিয়ে ঠকবেন না বা পছন্দের জিনিসটা হারাবেন না। অবশ্যই গাড়ি বা পণ্যটি নিজে দেখবেন। গুনগত মান বিচার করবেন। বাজার দর আন্দাজ করবেন। আপনি যে নিলামে গাড়িটি বিড করছেন সেটি ওই গাড়ির প্রথম নিলাম না হলে আগের নিলামে এর দর কখন কত পড়েছে খোঁজ নেবেন।
পারিপার্শ্বিক দিকগুলো বিবেচনায় এনে আপনার নিজের আন্দাজ খাটিয়ে দর প্রস্তাব করবেন। সিপি দরকার বা শর্তযুক্ত গাড়ির জন্য বিড না করাই ভালো। সিপি নিতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। আপনি যেহেতু ব্যবসা করবেন না, আপনার দেয়া দর উতরে যেতে পারে। পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের গাড়িটি।
নিলাম করতে গিয়ে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস/স্টেশনের নিলাম সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনারের কাছে জানতে চাইতে পারেন।কেউ ভয় দেখালে বা অভিযোগ থাকলে ওই হাউস/স্টেশনের কমিশনার বা আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা আছি আপনার ভ্যাট কাস্টমসের যেকোন সহায়তায়।
নিলাম, এর উদ্দেশ্য, নিলামের আইনীদিক ও নিলামকারীদের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর বিস্তারিত দিয়ে আরেকটা পোস্ট দেব। এ ছাড়া কোন কাস্টম হাউসে কত তারিখে নিলাম হচ্ছে, আপনি কার সাথে যোগাযোগ করবেন, সেটাও পোস্টে উল্লেখ করা হবে। তথ্য সংগ্রহ চলছে।