স্টাফ রিপোর্টার:
ব্যাংকে আমানত রাখলে বছর শেষে টাকা কমে যায়, এমন কথা এখন প্রচলিত সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। তাদের যুক্তি, ব্যাংকে আমানত রাখলে সুদ পাওয়া যায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ। বিপরীতে বছরে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে প্রায় ১০ শতাংশ। এমন হিসাব তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমেও খবর প্রচার হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর ওপর আগে থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা নির্ধারিত থাকায় চাইলেও বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে পারছিল না তারা। এতে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমানোর প্রবণতাও কমে যেতে দেখা যায়। বাড়তি টাকার প্রভাবে মানুষের মধ্যে বাড়তে থাকে খরচ করার প্রবণতা, যাতে বেড়ে যেতে দেখা যায় নিত্যপণ্যের দাম তথা মূল্যস্ফীতির হার।
এমন বাস্তবতায় এবার বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলো তাদের ইচ্ছেমতো সুদ নির্ধারণ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে, তবে সুদের হার কোনোভাবেই বর্তমান মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে সবশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোকে এখন আমানত সংগ্রহ করতে হলে কমপক্ষে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট জারি করা সার্কুলার রহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ আমানতের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা তুলে দেয়া হলো। এতে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগের নির্দেশনায় মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে রাখতে বলা হয়েছিল, তবে সেই সময় ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৯ শতাংশ।
গত জুলাই থেকে ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণে ৯ শতাংশের সীমা উঠে যায়। আবার বর্তমানে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমানত সংগ্রহ করতে বাড়তি সুদ গুনতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘ব্যাংক খাতে দায়-সম্পদের ভারসাম্যহীনতা রোধকল্পে ৩ মাস ও তদূর্ধ্ব মেয়াদি ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত এবং সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের মেয়াদি আমানতের ওপর সুদ/মুনাফার হার মূল্যস্ফীতির হার অপেক্ষা কোনোক্রমেই কম নির্ধারণ করা যাবে না।’
বিআরপিডির পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এর আগে ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের মধ্যে সুদহারের ব্যবধান তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংকিং ভাষায় যা স্পেড নামে পরিচিত। অর্থাৎ গ্রাহকের কাছ থেকে কত শতাংশ সুদে আমানত নেয়া হবে আর অন্য গ্রাহককে কত শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদান করবে, এই ব্যবধানকে স্পেড বলা হয়।
এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী স্পেড ছিল সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। অর্থাৎ আমানত ও ঋণের মধ্যে পার্থক্য হতে পারত সর্বোচ্চ চার শতাংশ, তবে নতুন নিয়মে এই সীমা তুলে দেয়া হয়। ফলে ব্যাংকগুলো চাইলে তখন থেকেই নিজেদের মতো করে ঋণ প্রদান ও আমানতের ওপর সুদ ধার্য করতে পারবে।