আরিফ রহমান শিবলী (নির্বাহী পরিচালক, কিডস মিডিয়া ও সদস্য, আমেনেস্ট্রি ইন্টারন্যাশনাল):
সভ্যতার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান অ’পূরণীয়। প্রযুক্তির ডানায় ভর করে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কার সহ’জ করে দিচ্ছে জীবনযাত্রাকে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরুন মোবাইল ফোন আজ যোগাযোগের দ্রুততম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। কিন্তু প্রযুক্তির উপকারী একটি মাধ্যম যখন ক্ষতির কারণ হয়, তখন সেটা ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটি আজ এমনই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইলের ‘ভয়ংকর’ ব্যবহারে আমাদের দেশের স্কুলপড়ু য়ারা ‘সর্বনাশের’ চরম সীমায় চলে যাচ্ছে।
প্রযুক্তির এ মাধ্যমটি ব্যবহার করে তারা বিনোদনের রঙিন আ’গুনে ঝাঁপ দিচ্ছে। কিছু না বুঝে ওঠার আগেই এ আ’গুনে পুড়িয়ে ফেলছে মূল্যবান সময় ও মেধা। নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে এক অশুভ স্রোতের মাঝে। বাংলাদেশে অনলাইন অ’প’রাধ প্রবনতা ব্যাপক বেড়ে গেছে। বেশীরভাগ অ’প’রাধই করছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
বেসরকারি এক জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তির পেছনে যে কারণগুলো উঠে আসছে এর মধ্যে অন্যতম হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন রগরগে ওয়েবসাইটে সহ’জে প্রবেশ ও গেমস। এ আসক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা কি আম’রা কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখেছি? কেন কোমলমতি শি’শু-কিশোররা মা’দকের মত মোবাইল আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে? এজন্য কি শুধু তারাই দায়ী? নাকি এর পছনে অন্য কারণও আছে?
অনুসন্ধান দেখা গেছে, বেশীরভাগ স্কুল-কলেজের মেয়েরাই অনলাইন সুরক্ষা স’ম্পর্কে জানেনা। মেয়েরা বিভিন্ন বয়সের পুরুষের মাধ্যমে প্রতারণা স্বীকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। স’ম্পর্কের নামে ভিডিও কলের মাধ্যমে এ সকল মেয়েরা নানা অ’প’রাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে, তার মাশুল দিতে হচ্ছে অ’ভিভাবকদের।
ঢাকা মেডিক্যাল লা’শ কা’টাঘর প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন কিশোরীর আত্নহ’ত্যার দেহ। এদের অনেকের বয়স ১৩ থেকে ১৭। যারা অনলাইনে ভিডিও কলসহ ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে নানা অ’প’রাধ করতে গিয়ে নিজেরাই প্রতারণার স্বীকার হয়ে আত্নহ’ত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে ভুলেও স্মা’র্টফোন তুলে দেওয়া ঠিক নয়। এতে অ’ভিভাবকরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিজেই নষ্ট করছে। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে আমি আরও খুঁজে পেয়েছি অনেক কিশোরী স্মা’র্টফোন ব্যবহার করে নিজের ব্যাক্তিগত গো’পন ছবি তুলে দিচ্ছে অন্যের কাছে। যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের নামে অশান্তি তৈরি হচ্ছে দেশে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মেস, হোস্টেলে অনেক কিশোরী স্মা’র্টফোন ব্যবহার করে প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা করছে।
যেটা আমাদের এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে। আমা’র অনুসন্ধান বলছে, বাংলাদেশ থেকে ১৩ থেকে ১৭ বছরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা স্মা’র্টফোন ব্যবহার করে নানা অ’প’রাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এদের অনেকেই গড়ে তুলছে পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন গ্রুপ। যেটা সমাজের চিত্র ভয়ানক করে তুলছে।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমা’র চোখে পড়েছে এমন ভয়ানক চিত্র তা তুলে ধ’রা খুবই জরুরী। বেশীরভাগ কিশোর এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন ম্যাসেজ গ্রুপ খুলে সেখানে ছিনতাই, ধ’র্ষণ ও নি’র্যাতন, চু’রিসহ হ’ত্যা পরিকল্পনা করে চলেছে। অ’ভিভাবকদের অসচেতনতাই এগুলো বাড়াচ্ছে বলে আমি মনে করি৷ এই ব্যাপারে আমি অনেক অ’ভিভাবকের সাথে কথা বলে বুঝলাম, সন্তান ঘরে ফিরেছে কিনা, কি করছে এমন তথ্যগুলো জানার জন্যই তারা স্মা’র্টফোন কিনে দিচ্ছে। অনেক শি’শু, কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীরা পথ হারাচ্ছে স্মা’র্টফোন ব্যবহার করে। আরও ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে স্মা’র্টফোন ব্যবহার দিনে দিনে মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট করে দিচ্ছে৷ সময় থাকতে স্মা’র্টফোন ব্যবহার বন্ধ করুন ও সন্তান, ছোট ভাইবোনকে দিন বাটন ফোন। যেগুলো ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সারাদিন নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ফোন একদমই নয়৷