এম.এইচ মুরাদঃ
করোনা শাসন করছে এখন পুরো বিশ্বকে। চারদিকে শুধু চাপা উত্তেজনা ও আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পুরো পৃথিবীর মানুষজন। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা মানুষের মনে উদ্বেগ বাড়াতে সাহায্য করছে। দেশটির মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ রিসার্চ এন্ড পলিসির (সিআইডিআরএপি) গবেষণা বলেছে, চলমান মহামারি শেষ হতে আরও দেড় থেকে দুই বছর লাগতে পারে। অন্তত বিশ্বের ৭০ ভাগ মানুষের শরীরে এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আগে এই রকম আভাস দিয়েছিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে সিআইডিআরএপি’র গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমরা অবগত হই। সেই প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা জানান, এই ভাইরাস এমন মানুষও ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে, যাদের দেখে মনে হতে পারে তারা অসুস্থ নয়। অর্থাৎ সেই মানুষেরা আক্রান্ত হয়েও একেবারেই উপসর্গহীন। ফলে টিকার হদিস পাওয়া যাক বা না যাক, যতক্ষণ পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষের শরীরে প্রাথমিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত করোনাকে রোখা কঠিন। কারণ অন্য যে কোনো ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই সব দেশের সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে যে, এই মহামারি এখনই শেষ হচ্ছে না। সাধারণ মানুষকেও এখন থেকেই মানসিকভাবেই দৃঢ় ও সতর্ক থাকতে হবে। মেনে চলতে হবে শারীরিক দূরত্ব। বার বার হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সব পরামর্শ। এই গবেষকরা করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে ১৯১৮ সালের মহামারি স্প্যানিশ ফ্লুর মিল খুঁজে পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের এই গবেষণা পৃথিবীর মানুষের মনে হতাশার সৃষ্টি করলেও মানসিক শক্তি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। এই মহামারি আর কতদিন পৃথিবীকে ভোগাবে, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মানুষের কপালে। কিন্তু কোথাও কি আশার আলো নেই? ধরতে গেলে পুরো বিশ্ব করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য মরিয়া। কোন্ দেশ কার আগে সেই সুসংবাদটি দেবে-তার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে মানুষ। তারা বোঝে-সংকট একেবারে চিরস্থায়ী হতে পারে না। ইতোপূর্বে যতটা মহামারি বা ভাইরাস পৃথিবীতে এসেছে, সবক’টির মুখোমুখি হয়েছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে মোকাবেলা করেছেন সেই মহামারির। এদিকে আগামী আট মাসের মধ্যেই নভেল করোনা ভাইরাসের টিকার ৩০০ মিলিয়ন ডোজ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’। টিকা আবিষ্কারের পর তা মানবদেহে প্রয়োগের উপযুক্ত করতে যেখানে পাঁচ বছরের মতো সময় লাগে, সেখানে এই মহামারি রুখতে বিজ্ঞানীরা ১২ থেকে ১৮ মাস সময় চাচ্ছেন। কিন্তু দিন দিন আক্রান্ত সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ট্রাম্প প্রশাসন সেটাকে আট মাসের মধ্যেই নামিয়ে এনেছে। এজন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে।
কেবল যুক্তরাষ্ট্রই দ্রুত ভ্যাকসিন বাজারে আনার চেষ্টা করছে, তা নয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে একজন বিজ্ঞানীও র্যাপিড ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে মানবদেহে তা প্রয়োগও করা হয়েছে। এমন কি গিলবার্ট ৮০ ভাগ সফল হওয়ার কথাও বলেছেন। আর আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কয়েক মিলিয়ন ডোজ বাজারে আনতে চান তিনি। এছাড়া করোনা রোগীদের দ্রুত রোগমুক্তির জন্য বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে। মোট কথা হলো- পৃথিবীর মানুষ তাকিয়ে আছে বিজ্ঞানীদের দিকে। করোনা চিকিৎসায় যেটি সর্বাত্মক কার্যকর হিসেবে নিশ্চয়তা প্রদান করবে, সেটিকে বাজারজাত করা হবে। সেটা হবে সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্যও লড়াই করতে হবে। করোনাকাল দীর্ঘস্থায়ী হলে আমাদের করণীয় কী হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ইতিমধ্যে যদি আশার আলো পাওয়া যায়, তাহলে তো ভালো। না হলে প্রতিরোধের জন্য তৈরি থাকতে হবে সবাইকে।