এম.এইচ মুরাদঃ
করোনা পরিস্থিতিতে শপিংমল ও মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করার বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন শপিং। নামিদামি বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা করছেন অনেকেই। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই প্রতারণায় মেতেছে একটি চক্র। ফেসবুকে এমন অসংখ্য অনলাইন শপিং পেজ রয়েছে, যেগুলো নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে। এরপর নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে। আবার কোনো কোনো পেজ এক পণ্যের অর্ডার নিয়ে ভোক্তাকে ভুল পণ্য সরবরাহ করে। অসংখ্য গ্রাহকের এমন অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। আবার কিছু প্রতারক চক্র আরও একধাপ এগিয়ে। তারা স্বল্পমূল্যে আকর্ষণীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যখন গ্রাহক তাদের পেজে অর্ডার করে, তখন তারা পণ্যমূল্যের কিছু অংশ অগ্রিম দাবি করে। বিকাশে অ্যাডভান্সের টাকা পরিশোধ করার পর ওই গ্রাহক দেখতে পান তাকে পেজটি থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ‘ফ্যাশন হাউস’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আকর্ষণীয় পোশাকের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত চারটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ ও ১৬টি সিম উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- ওসমান গণি (২৫) ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার স্বর্ণা (২১)। শুধু এ দম্পতির বিরুদ্ধেই অসংখ্য গ্রাহকের অভিযোগ জমে সিআইডির কাছে।
তারা ফেসবুক পেজে মেয়েদের পোশাকের আকর্ষণীয় ছবি পোস্ট করে কম দামে বিক্রির লোভনীয় অফার দিয়ে আসছিলেন। এতে অনেকেই আকৃষ্ট হয়ে অনলাইনে অর্ডার করতেন। তখন গ্রাহককে জানানো হতো পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করার কথা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলেও আজ পর্যন্ত কোনো ক্রেতাই অর্ডার করা পণ্য হাতে পাননি বরং ওই পেজ থেকে অর্ডার করা গ্রাহকদের প্রত্যেককে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সিআইডির সাইবার পুলিশ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগরের কাশেম নগর আবাসিক এলাকা থেকে ওসমান ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এ দম্পতি স্বীকার করেছে তারা দীর্ঘ এক বছর ধরে ‘ফ্যাশন হাউস’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে হাজারো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠিয়ে ফেসবুক পেজ থেকে তাদের ব্লক করে দিত এ দম্পতি। পরবর্তীতে তারা নিজেদের আড়াল করতে ‘ফ্যাশন হাউস’ পেজটির নাম পরিবর্তন করে ‘ফেসবুক জোন’ নাম দিয়ে আবারও একই প্রতারণামূলক কাজ চালিয়ে আসছিল।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিয়ত ফেসবুকে অনলাইন শপিংয়ের নামে প্রতারণার শিকার হওয়া এমন অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। এ চক্রগুলোকে ধরতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে মানুষ একটু সচেতন হলে খুব সহজেই প্রতারকদের এসব ফাঁদ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন পুরান ঢাকার মিজানুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, স্মার্টজোন নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে এলইডি টিভির বিজ্ঞাপন দেখি। সেখানে খুবই কম মূল্যে অরিজিনাল সনি এলইডি টিভির কিছু অফার ছিল, সেখান থেকেই একটি অর্ডার করি। সেই টিভি কেনা দুই মাসের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়, পরে সেই পেজটি আমি খুঁজে পাইনি। টিভি সার্ভিসিং করাতে গিয়ে জানতে পারি এগুলো চায়না থেকে আনা খুবই নিম্নমানের টিভি, তাতে সনির লোগো ব্যবহার করে গ্রাহকদের গছিয়ে দিচ্ছে কিছু প্রতারক।
রাসেল মাহমুদ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি একটি ফেসবুক পেজে খুব কম টাকায় স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন দেখে সেখানে যোগাযোগ করি। তারা একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলে এ নম্বরে প্রোডাক্টের টাকা অগ্রিম বিকাশ করতে। আমার ঠিকানা ও ফোন নম্বর নেওয়ার পর তারা জানায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘড়িটি হোম ডেলিভারি চলে আসবে। কিন্তু সেই ঘড়ি আমি আর পাইনি। এরপর দেখি পেজটি থেকে আমাকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।