ডা: নুসরাত সুলতানাঃ
ওজন নিয়ে চিন্তা আর নয়। এবার ওজন দ্রুত কমাবে, হার্ট সুস্থ রাখবে কিটো ডায়েট। গত কয়েক বছরের সর্বোচ্চ কার্যকারিতার জন্য এই ডায়েটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহু গুণে।
কী এই কিটো ডায়েট?
এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে বেশি করে খেতে হবে প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার। আর তা থেকেই শরীরের এনার্জির ঘাটতি মিটবে। মস্তিষ্কের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতে যে যে উপাদানের প্রয়োজন পড়বে, শরীর তাও সংগ্রহ করবে প্রোটিন এবং ফ্যাটি খাবার থেকেই।
কার্বোহাইড্রেড জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিলে শরীর যে বিশেষ Metabolic State-এ চলে যায়, তাকেই চিকিৎসার ভাষায় কিটোসিস নামে ডাকা হয়ে থাকে। আর সেই থেকেই এই ডায়েটের নাম কিটো ডায়েট। চিকিৎসকেদের মতে শরীর যখন কিটোসিস স্টেটে থাকে, তখন প্রচুর মাত্রায় ফ্যাট বার্ন হয়, যে কারণে ওজন কমতে (Weight Loss) একেবারেই সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার না খাওয়ার কারণে ব্লাড সুগার এবং ইনসুলিন লেভেল একেবারে ঠিক থাকে। এছাড়াও আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
কিটো ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করার আগে কখন, কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ভাল ভাবে জেনে নেওয়াটা জরুরি। না হলে কিন্তু শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এমনকী বেশ কিছু স্কিন ডিজিজ দেখা দিতে পারে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে, তেমনি শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
দৈনিক কত ক্যালরির খাবার কিটো ডায়েটে খাবেন, তা আপনার বিএমআই(Body mass index), বিএমআর(Basal metabolic rate), TDEE (Total daily energy expenditure) ও ক্যালরি ডেফিসিট % হিসেব করে নির্ণয় করতে হয়।
বিভিন্ন ধরনের কিটো ডায়েটঃ
স্ট্যান্ডার্ড ডায়েট: খাদ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ চর্বি, ২০ শতাংশ প্রোটিন ও মাত্র ৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে।
সাইক্লিক্যাল ডায়েট: এতে সপ্তাহে খাবারে পাঁচ দিন কম শর্করা এবং বাকি দুদিন বেশি শর্করা যোগ করা হয়।
টার্গেটেড ডায়েট: স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েটের মতোই। তবে কায়িক পরিশ্রমের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় শর্করা যোগ করা হয়।
হাইপ্রোটিন ডায়েট: এ পদ্ধতিতে খাদ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ চর্বি, ৩৫ শতাংশ প্রোটিন ও ৫ শতাংশ শর্করা থাকে।
দেহে শর্করার পরিমাণ কমায় বলে এই খাদ্য পরিকল্পনা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারএ।
✅যা যা এই ডায়েট প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করা যায়ঃ
১| তেল (অলিভ এবং নারকেল তেল)
২| অ্যাভাকাডো
৩| ক্রিম
৪| পনির
৫| বাদাম
৬| সবুজ শাক-সবজি
৭| শসা, ব্রকলি এবং ফুলকপির মতো সবজি
৮| মুরগির মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস
৯| ডিম
১০| সব ধরনের মাছ।
কী কী খাওয়া যাবেনাঃ
কিটোজেনিক ডায়েটে চিনি এবং চিনি দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। উচ্চ শর্করাজাতীয় খাবার, যেমন ভাত, পাস্তা, নুডলস এবং শর্করাজাতীয় সবজি, যেমন আলু, মিষ্টিকুমড়া, গাজরও খাদ্যতালিকায় থাকা চলবে।
✅কিটো ডায়েটের উপকারিতাঃ
১| মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে:-
Ketogenic Diet মেনে খাবার খেলে Neurons-এর ক্ষমতা বাড়ে। সঙ্গে মস্তিষ্কের ভিতরে এমন কিছু এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে চোখে পড়ার মতো। এমনকী অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। বৃদ্ধি পায় স্মৃতিশক্তিও।
২| হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:-
এই বিশেষ ডায়েট প্ল্যানটি মেনে খাবার খেলে একদিকে যেমন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, তেমন ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও কমে চোখে পড়ার মতো। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
৩| শরীরের ভিতরে প্রদাহের (Inflammation) মাত্রা কমে:-
বেশ কিছু স্টাডির পর একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে কিটো ডেয়েট মেনে খাবার খেলে শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমে।
৪। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের (PCOS) প্রকোপ কমায়:-
বিশেষজ্ঞদের মতে কিটোজেনেটিক ডায়েট মেনে খাবার খেলে শরীরে ইনসুলিন লেভেল ঠিক থাকে, যে কারণে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। ব্রণ দূর করে। মাসিক নিয়মিত করে।তবে এই ব্যাপারে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
⏩কিটো ফ্লুঃ
হঠাৎ করে কিটো ডায়েট শুরু করলে কিটো ফ্লু দেখা দিতে পারে। এর ফলে শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, ক্ষুধা বৃদ্ধি, ঘুম না হওয়া বা আগের চেয়ে বেশি হওয়া, বমি ভাব, হজমে সমস্যা, ব্যায়াম করতে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
⏩কিটো র্যাশঃ হাতে পায়ে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
⏩হজমে সমস্যা
⏩পানি ও লবণ শূন্যতা। ইত্যাদি।
পরামর্শে:
ডা: নুসরাত সুলতানা
ক্লিনিকাল, কস্মেটিক ডার্মাটোলজিস্ট এন্ড লেজার স্পেশালিষ্ট ।