মোঃ সেলিমঃ
এবার চাকরী গেল মসজিদের ইমামের। মুসল্লিদের সরকারি নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায় করতে বলেছিলেন ইমাম। আর এটিই কাল হয়ে দাড়ালো ইমামের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে গণজমায়েত বন্ধে গত ৬ এপ্রিল থেকে পাঁচ ওয়াক্তে নামাজে সীমিত মুসল্লি নিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় এবং অন্যদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেয় সরকার।
এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নির্দেশনাটি ইমাম নামাজ শেষে মসজিদে আগত মুসল্লিদের জানিয়ে দেন। নির্দেশনাগুলি মেনে চলার মুসল্লিদের অনুরোধ করেন। এতে ওই ইমামের প্রতি ক্ষেপে যান কিছু মুসল্লি।
৭ মে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারদোনা আদর্শ পাড়া এলাকায় এমন ঘটনায় চাকরী যায় ইমামের । চাকরী যাওয়া ইমামের নাম মাওলানা বেলাল উদ্দিন। তিনি শাহ আকামুদ্দিন জামে মসজিদের পেশ ইমাম।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দশ মাস ধরে মাওলানা বেলাল উদ্দিন শাহ আকামুদ্দিন জামে মসজিদের পেশ ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সরকারি নিয়মের কথা বলায় গত ২৩ এপ্রিল ওই মসজিদে এশার নামাজের পর স্থানীয় ইলিয়াছ সুবেদার, পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ নবী সওদাগর, মোস্তাক সওদাগর, আলী, জাফর সিকদারপাড়ার অলি মিয়ার ছেলে ইলিয়াছসহ আরও কয়েকজন মুসল্লি ইমামের সঙ্গে তর্কে জড়ান। তখন ইমাম মুসল্লিদের কোরআন হাদিসের আলোকে বুঝিয়ে বলেন।
কিন্তু ওই মুসল্লিরা বলে উঠেন সরকারি নিয়মে মসজিদ চলবে না। এটা মুসল্লিদের মসজিদ থেকে দুরে সরানোর পন্থা। ইমাম ভিতু মানুষ। তাই এসব কথা বলতেছে।
পরে মসজিদের ইমাম বেলাল বিষয়টি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলামকে অবহিত করলে তারা সরকারি নির্দেশনা মেনে মসজিদে নামাজ পড়ানোর জন্য বলেন। পর দিন ফজর নামাজের পর ওই মুসল্লিদের কয়েকজন জড়ো হয়ে ৫ জনের বেশি যত মুসল্লি হোক সবাইকে নামাজ পড়ার ঘোষণা দেন।
ইমাম নিয়ে কিছু মুসল্লিদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হওয়ায় পরিচালনা কমিটির লোকজন ২৪ এপ্রিল ইমাম বেলাল উদ্দিনকে ছুটিতে পাঠান। পরিচালনা কমিটির নির্দেশে ৭ মে বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে ইমাম মসজিদে চলে আসেন।
এইদিন ইমাম বেলাল জোহরের নামাজের সময় মসজিদে প্রবেশ করলে ইলিয়াস সুবেদার, মোস্তাক, মো. ইলিয়াছ, আলী, মো. রফিক ও নবীসহ আরও কয়েকজন মসজিদে হট্টগোল করলে পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে মোসাদ্দেক হোসেনসহ স্থানীয় সময়ের বাতিঘর সংগঠনের সদস্যদের হস্তক্ষেপে মসজিদের মুয়াজ্জিনের ইমামতিতে নামাজ শেষ হয়।
নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত মুসল্লিরা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারির কাছে ইমাম বেলালকে বহিস্কার করতে চাপ দেয়।
কমিটির সেক্রেটারি কোনো কারণ ছাড়া ইমামকে বহিস্কার করা হবে না জানালে ইলিয়াস সুবেদারের নেতৃত্বে কতিপয় মুসল্লিরা বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ইমাম বেলালকে মসজিদ ত্যাগের নির্দেশ দেন। অন্যথায় যেকোন ঘটনার জন্য ইমাম, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি দায়ী থাকবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়।
মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলাল উদ্দিন বলেন, মুসল্লিদের সরকারি নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায় করতে বলেছিলাম। এতে কয়েকজন মুসল্লি আমাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে চলে যেতে বলেন। আমি কমিটির কাছে দুটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। তাঁরা আমার একটি প্রস্তাবও রাখেননি। আমি সরকারি নির্দেশনা মানতে বলায় এই দুর্যোগ মুহুর্তে আমাকে কোনো সময় না দিয়ে বিদায় করে দেন। এটা তাঁরা আমার প্রতি অমানবিক আচরণ করল।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম বলেন, করোনা বিস্তার রোধে সীমিত সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য ধর্ম মন্ত্রণাল যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন, ইমাম সাহেব সরকারি সে নির্দেশনা মানার জন্য মুসল্লিদের বার বার অনুরোধ করেছেন।
এজন্য কয়েকজন তার পেছনে লেগে এলাকায় অশান্তি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমি বলেছি তাকে বিদায় না করতে। এতে অনেকে আমার উপরও ক্ষেপেছে।