স্টাফ রিপোর্টার:
বিশ্ব মুসলিমদের কাছে পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনায় বিপুল সংখ্যক উমরাহ যাত্রীর সমাগম ঘটেছে চলতি রমজান মাসে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মুসল্লির আগমণে রীতিমতো মুখরিত সৌদি আরবের দুই শহর।
আরবি চন্দ্র বর্ষপঞ্জীর নবম মাস রমজানে বরাবরই উমরাহ যাত্রীদের ভিড় হয় মক্কা-মদিনায়। তবে এবারের মতো সংখ্যক উমরাহ যাত্রী এর আগে দেখা যায়নি। অনেকের মতে, এর একটি বড় কারণ আবহাওয়াগত অবস্থা। মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে গরমকাল পুরোপুরি শুরু হয় এপ্রিল থেকে। তার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া বেশ সহনীয় ও আরামদায়ক থাকে। চলতি বছর সৌদিতে রমজান শুরু হয়েছে ১১ মার্চ থেকে।
আজ ১৫ মার্চ শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম জুম্মায় মক্কার কাবা শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববিতে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। বিশেষ করে কাবা শরিফ চত্বরের পুরো এলাকা কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল।
এমনকি মসজিদে জায়গা না পেয়ে অনেকে মক্কার বিভিন্ন হোটেলেও জুম্মার নামাজ পড়েছেন। কাবা শরিফের সঙ্গে অডিও ট্রান্সমিশন যোগাযোগ রয়েছে হোটেলগুলোর। এর মাধ্যমেই কাবা শরিফের ইমামের খুৎবা ও ইমামতির সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হতে পেরেছেন তারা।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুলাজিজ আল সৌদ চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১ হাজার মুসল্লির ওমরাহের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করবেন। এই মনোনীতি অতিথিদের মধ্যে অন্তত ২৫০ জন চলতি রমজানে এসেছে। বাংলাদেশসহ ইউরোপ-এশিয়ার ১৬টি দেশ থেকে এসেছেন এই অতিথিরা।
সৌদি বাদশাহর অতিথি হিসেবে এবারের রমজানে উমরাহ পালনের জন্য মক্কায় এসেছেন বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনজেরিন শহীদ। মুনজেরিন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি এর আগে এই ঐতিহাসিক জায়গা সম্পর্কে অনেক শুনেছি, কিন্তু এই প্রথম এখানে আসা হলো।’
মুনজেরিন আরও জানান, চারপাশে বিভিন্ন দেশের মানুষ থাকলেও ভাষাগত বা সংস্কৃতিগত কোনো বিভাজন তিনি বোধ করছেন না।
‘ভাষা ও সংস্কৃতিগত বিভাজন থাকলেও এখানে আসা লোকজনদের মধ্যে ব্যাতিক্রমী এক ঐক্য গড়ে উঠেছে। আমি আবারও এখানে আসতে চাই।’
সৌদি বাদশাহর অতিথি হিসেবে নিউজিল্যান্ড থেকে এসেছেন মুসা তাকাই। ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবং সৌদি বাদশাহর প্রতি কৃতজ্ঞ। সৌদি কর্তৃপক্ষ আতিথেয়তার কোনো ত্রুটি রাখেনি।’
সৌদি বাদশাহর অতিথি তালিকায় নেই— এমন বাংলাদেশির সংখ্যাও অজস্র। বাংলাদেশের সাংসদসদস্য ফেরদৌস আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ‘আমার মা, শ্বাশুড়ি, ছোটো বোন এবং আমি— আমার পরিবার থেকে এই চারজন এবার উমরাহ করতে এসেছি। এই উমরাহ যাত্রা যে কেবল ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস ও নিবেদনের একটি সুন্দর সাক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির পর থেকে বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক হজ ও ওমরাহ যাত্রী আসা শুরু করেছেন সৌদি আরবে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সৌদি আগত হজ ও ওমরাহযাত্রীদের শতকরা হার ছিল মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫৬ শতাংশ বেশি।