গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগ তীর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলছে বিভিন্ন ভাষায় বয়ান। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আলেমরা বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করছেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বয়ান শোনেন। প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বাদ ফজর থেকে ইজতেমা মাঠে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান।
রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে এগারটার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা সূত্রে জানা গেছে।
এরআগে হেদায়েতি বয়ান করা হবে। তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। ইজতেমার প্রথম পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে।
শনিবার সকালে টঙ্গী শহর ও ইজতেমাস্থলের আশপাশ এলাকা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এদিনও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। সেটি আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।
যারা বয়ান করছেন
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হক। সকাল ১০টায় বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, মাদরাসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদ, আরব জামাতের জন্য বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, বোবা ও বধিরদের জন্য বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা সানোয়ার, বিদেশি জামাতের মুসল্লিদের জন্য ইংরেজিতে বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা ইফতার জামান। বাদ জোহর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ফারুক। বাদ আসর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা যুহাইরুল হাসান এবং অনুবাদ করবেন মাওলানা যোবায়ের।
সকালে বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। এ মেহনত খুলুসিয়াত ও আজমতের সঙ্গে যারা করবে তাদের যে কোনো আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়। বয়ানে বলা হয়, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
এদিকে শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন। নামাজে অংশ নিতে প্রথম পর্বের ন্যায় গাজীপুর ও ঢাকাসহ আশপাশের জেলার মুসল্লিরা সকাল থেকে ময়দানে আসতে শুরু করেন। দুপুরের আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলে ময়দানে স্থান না পেয়ে সড়ক ও অলিগলিসহ বিভিন্ন স্থানে পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ, চাদর ও পলিথিন বিছিয়ে মুসল্লিরা জুমার নামাজে শরিক হন।