মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলার জমিনে ইসলাম প্রচারে মাইজভাণ্ডারীর অবদান ও জীবনী


প্রকাশের সময় :২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ৭:২৩ : অপরাহ্ণ


এস.এম. মাঈন উদ্দীন রুবেল:

বাংলার জমিন তথা চট্টলার জমিনে ইসলাম প্রচারে গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী ও মাইজভাণ্ডারী তরিকার অবদান অপরিসীম। ১৮০০ শতাব্দী থেকে ইসলাম প্রচারে এ তরিকার ভূমিকা অন্যতম। মাইজভান্ডারী তরিকার ইমাম ও আধ্যাত্মীক শরাফতের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) –এঁর বাণী“তাহাজ্জুদের নামাজ পড়,ছালাতু তছবীহের নামাজ পড়িও, কোরান শরীফ তেলাওয়াত করিও।” “কবুতরের মত বাছিয়া খাও। হারাম খাইও না, নিজ সন্তান সন্ততি নিয়া খোদার প্রশংসা কর ।””আমার ছেলেরা সারা বছর রোজা রাখে, কারণ তারা গোনাহের কাজ থেকে নিজকে বিরত রাখে।”উনার এমন মূল্যবান বাণী মানুষ ও ভক্তবৃন্দকে খোদাপ্রেমে জাগ্রত করেছে।

গাউছুল আজম শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) হচ্ছেন রাসূলে পাক (সাঃ) এর তাজধারী গাউছুল আজম ও আওলাদে রাসূল (সাঃ) গাউছে পাক আব্দুল কাদের জিলানীর নাতির ঘরের পতি হযরত হামিদ উদ্দীন বোগদাদির বংশধর। যিনি গ্রামের মক্তব শেষে কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে যশোরের কাজী পদ অর্থাৎ বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তা ইস্তফা দিয়ে কলিকাতায় মুন্সি বু-আলী আলীয়া মাদ্রাসার প্রধান মোদাররেছ হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি অধ্যাত্মিক পূর্নতা লাভের জন্য পাকিস্তানের বিখ্যাত সূফী সাধক হযরত সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ লাহোরী আল কাদেরী (রহঃ) এর শিষ্যত্ব লাভ করেন।

কঠিন সাধনা ও রিয়াজতের ফলে তিনি বেলায়তের শাহীনশাহ কুতুবুল আকতাব গাউছুল আজম উপাধি লাভ করেন। কারন তিনি দুনিয়ায় ভূমিষ্ট হওয়ার আগে আল্লাহর হাবীব হুজুরে পাক (সাঃ) হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) পিতা হযরত সৈয়দ মতিউল্লাহ (রঃ) কে স্বপ্নযোগে বলেন তোমার ঔরসে আমার একজন প্রিয় বন্ধু আসবে যার নাম রাখবে আহমদ উল্লাহ।  ঠিক হুজুর গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী দুনিয়াতে আগমনের পর তার নাম রাখা হয় সৈয়দ আহমদ উল্লাহ।  তাই তিনি মাতৃগর্ভ থেকে অলিআল্লাহ। কিন্তু তিনি যে গাউছুল আজম বেলায়তর শাহীনশাহ হবেন সেই জন্য মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন উনাকে দুনিয়াবী শিক্ষায়ও শিক্ষিত করে স্বীয় পীরের মাধ্যমে আধ্মত্মিকতা লাভ করান। তখন তার বেলায়তের ক্ষমতার নিকট তৎকালীন উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেমগন শিষ্যত্ব লাভ করে কামেলে মোকাম্মেল বোনে যান। এবং তাদেরকে তিনি খলিফা নিযুক্ত করে ইসলাম প্রচারের জন্য আদেশ দেন। উনারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরআন হাদিস ও বেলায়তি ক্ষমতায় ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে সুন্নিয়তকে জিন্দা করে রেখেছেন। যার ফলস্বরূপ আজ বাংলাদেশে সুন্নিয়ত ও ইসলামের এত বিশাল প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে। গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী ও খলিফাগনের দরবারে কোনো ভেদভেদ নেই।  মাইজভাণ্ডার দরবার ও খলিফাগনের দরবারগুলোতে এখন সকল, ধর্মের সকল গোত্রের মানুষ যায় ইসলাম ও সূফীতত্ত্বের নিদর্শন নিতে। মাইজভান্ডার দরবার  সৌহার্দ্য,সম্প্রীতি, ভালোবাসা, আদর্শ, মানবতা, ও ঐশী প্রেমের দরবার। এই দরবার এবং খলিফাগনের দরবারে হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মাবলম্বীরা যাই। তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে অনেক সময় আওলাদে পাকদের নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে থাকে। হযরত কেবলা ও হযরত বাবা ভাণ্ডারী উনাদের প্রেম ভালোবাসা, আদর্শ ও আল্লাহ প্রদত্ত বেলায়তি  ক্ষমতাবলে ইসলাম প্রচার করেছেন। বহু বেদিনকে দ্বীন দিয়েছেন বহু বে-ঈমানদারকে ঈমান দিয়েছেন। এখনো এই দরবার থেকে ইসলাম প্রচার চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। বর্তমানে দরবারের আওলাদগন কোরআন সুন্নাহর আলোকে দেশ-বিদেশে ইসলাম প্রচার ও মাইজভাণ্ডারী তরিকাকে বৈশ্বিকরূপ দান করছে। এই দরবারের মূল বিষয়বস্তু হল আদব ও প্রেম। 

গাউছুল আজম হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)  পিতা হযরত শাহসূফী সৈয়দ মতিউল্লাহ (রহঃ) ও মাতা সৈয়দা খায়েরুন্নেছা বিবি (রহঃ) এর ঔরসে ১৮২৬ সালে , ১২৪৪ হিজরি ,১২৩৩ বাংলা ১লা মাঘ, রোজ বুধবার  আওলাদে রসূল(সাঃ)চট্টগ্রাম শহর হতে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে তৎকালীন প্রত্যন্ত মাইজভান্ডার গ্রামে আগমন(জন্ম) করেন। গাউছুল আজম হযরত আহমদ উল্লাহ (কঃ) এর  পূর্বপুরুষগণ ছিলেন সৈয়দ অর্থাৎ নবীজির বংশধর। মূলত হযরতের পূর্বপুরুষগন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য  মদিনা শরীফ থেকে বাগদাদ শরীফ ও দিল্লি হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলার পূর্ববর্তী রাজধানী গৌড় নগরে চলে আসেন। হযরত আহমদ উল্লাহ (কঃ) প্র-প্রপিতামহ হুজুর গাউছে পাকের আওলাদ হযরত  হামিদ উদ্দীন বোগদাদি (রঃ) ছিলেন গৌড়ের নিযুক্ত ইমাম ও কাজী, কিন্তু গৌড় নগরে হঠাৎ মহামারীর প্রকট আকার ধারনের  কারণে তিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার হামিদ গাঁ নামক এলাকায় চলে আসেন। এলাকাটি তখন উনার নামে নামকরণ হয়েছিল যা বর্তমানে হাইদগাঁ নামে আছে। হযরত হামিদ উদ্দীন বোগদাদির ছেলে হযরত সৈয়দ আবদুল কাদিরকে আধুনিক সময়ে ফটিকছড়ির আজিমনগরের ইমাম করা হয়েছিল। তার দুই পুত্র ছিল; সৈয়দ আতাউল্লাহ ও সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ। সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ’র তিন পুত্র ছিল; সৈয়দ আহমদ, সৈয়দ মতিউল্লাহ ও সৈয়দ আবদুল করিম, তন্মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র হলেন সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর পিতা।

শিক্ষা জীবনহযরত আহমদ উল্লাহ (কঃ) গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১২৬৮ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষা শেষ করেন। সেখানেই তিনি তৎকালীন  কৃতিত্বের সহিত গোল্ড মেডালিস্ট পেয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রিত অতিথি বা বক্তা হিসাবে ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি উনার পীর হযরত সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ সালেহ কাদেরী লাহোরীর কাছ থেকে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি আবু শাহমার বড় ভাই সৈয়দ  দেলোয়ার আলী পাকবাজ লাহোরীর কাছ থেকেও অধ্যয়ন করেন।

কর্ম জীবনতিনি শিক্ষা জীবন শেষে করে হিজরী ১২৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের যশোর অঞ্চলের বিচার বিভাগীয় কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে মুন্সেফী অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলিকাতায় মুন্সী বু আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেছ হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে মুন্সেফী পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ছিলেন।

আধ্যাত্মিকতা অর্জনঃ গাউছুল আজম হযরত কেবলা তার পীরে তরিকত শেখ সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী (রহঃ) এর কাছ বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি পীরে তরিক্বতের বড় ভাই হযরত সৈয়দ দেলোয়ার আলী পাকবাজ (রহঃ) –এঁর কাছ থেকে কুতুবিয়তের ফয়েজ অর্জন করেন।আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী হাদিস, তাফসির, ফিকহ, মানতিক, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসাবে তার খ্যাতি ছিল। অল্প কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন।

মাইজভান্ডারী তরিকা প্রতিষ্ঠা ও মাইজভান্ডার শরীফ – এর গোড়াপত্তনঃহযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁর পীরে ত্বরিকতের নির্দেশে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। খোদার রহমতে আধ্যাত্মিক সাধক ও আশেকভক্তের ভীড়ে এই সাধকের পবিত্র বাসভূমি  বিশ্ব মানবতার কল্যাণধারক এক উচ্চমার্গীয় আধ্যাত্মিক দরবারে পরিণত হয়। লোকসমাজে পরিচিতি পায় ‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফ’ হিসেবে। 

হযরত কেবলার (কঃ) অসংখ্যা কারামতের ঘটনা বিভিন্ন গ্রন্থে ও লোকমুখে প্রচারিত। যেমনঃ (১) হযরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে চট্টগ্রাম শহরে মোহছেনিয়া মাদ্‌রাসা প্রতিষ্ঠা ও মোদার্‌রেছ নিযুক্তি। (২) হযরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে এক রাতে মক্কা শরীফ হতে চট্টগ্রাম শহরে হাজীর প্রত্যাগমন। (৩) হযরতের বেলায়তী ক্ষমতায় বাহুতে হাত রেখে জনৈক হাজীর অলৌকিক ভাবে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন (৪) হযরত তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতায় অযুর মহূর্তে বদনা মোবারক নিক্ষেপ করে, সেই বদনা মোবারক  ৪৮ মাইল দূরে বাঘের মাথায় পরে ভক্তকে উদ্ধার (৫) হযরতের বেলায়তী প্রভাবে মৃত্যূকালে আজরাইল ফেরত ও ষাট বৎসর আয়ু বৃদ্ধি। (৬) হযরতের আদেশে রেয়াজ উদ্দিন উকিলের ভূ-সম্পত্তি খরিদ ও রেয়াজ উদ্দিন বাজারের পত্তন। (৭) হযরতের আশ্চর্য্য কেরামতে বগলের নীচে কাবা শরীফে মুছল্লির প্রবেশ করতে দেখা -ইত্যাদি। এই ধরনের উচ্চমার্গীয় কেরামত গাউছে আজমিয়তের পরিচয় বহন করে।হযরত মুহিউদ্দীন ইবনুল আরবীর ভবিষ্যৎবাণীঃ বিশিষ্ট ছুফী তাত্ত্বিক গবেষক ও বুযুর্গ হযরত মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী তাঁর ‘ফছুছুল হেকম’ গ্রন্থের ‘ফচ্ছে শীচি’ অধ্যায়ে হযরত গাউছুল আজম মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এঁর আগমণ ও তাঁর গাউছুল আজম হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।
বিশ্ব মানবতায় বেলায়তের স্বরূপঃ হযরত আকদাছ (কঃ)’র বেলায়তের পরশ পেয়ে ধন্য হয়েছেন কবরস্থ  বুজুর্গানে দ্বীনন এবং তারা জামালী হাল হতে জালালীর মধ্যে রূপ ধারণ করেছেন। কামালিয়তের বা বুজুর্গীর কোন প্রশংসা তাঁর বুজুর্গীতে বাদ পড়েনা। তিনি এমন এক খোদা -প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব সম্পন্ন অলি , যিনি খোদার ইচ্ছা শক্তিতে তাঁর গাউছে আজমিয়তের প্রভাবে জনগণের না হওয়ার মত অসম্ভব বস্তুকে সম্ভব হওয়ার রূপ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। হযরতের সাথে হযরত খাজা খিজির (আঃ) এঁর খুবই ঘনিষ্ট আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল। সমসাময়িক ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গগণ তাঁর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্ণ উচ্চ ধারণা পোষন করতেন যা তাদের লিখিত কসিদা,বাণী,শের,কবিতা,গান ইত্যাদি থেকে উপলদ্ধি করা যায়। হযরত কেবলার আধ্যাত্মিকতার পরশ পেয়ে অসংখ্যা অলী-দরবেশ বিভিন্ন স্থানে আধ্যাত্মিকতার দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে বিশ্ব মানবতার কল্যাণের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রেখেছেন।

গাউছুল আজম হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) –এঁর বাণী“তাহাজ্জুদের নামাজ পড়,ছালাতু তছবীহের নামাজ পড়িও, কোরান শরীফ তেলাওয়াত করিও।”“কবুতরের মত বাছিয়া খাও। হারাম খাইও না, নিজ সন্তান সন্ততি নিয়া খোদার প্রশংসা কর ।”সাজ্জাদানশীনে গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ)-এঁর বাণী“গাউছে মাইজভান্ডারীর আদর্শ উর্ধে তুলিয়া ধরিলে বিশ্ববাসীর চোখ চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ঘুরে যাবে।গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী সম্পর্কে সমসাময়িক ও পরবর্তি ছুফী ওলামায়ে কেরাম তাঁর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর গাউছে আজমিয়তের স্বীকৃতি দিয়েছেন-“গাউছে মাইজভান্ডারীর নিঃশ্বাসের বরকতে পূর্বদেশীয় লোকেরা খোদা পন্থী ,হাল ও জজ্‌বার অধিকারী হয়েছে। তিনি কবরস্থ হওয়ার ফলে বিভিন্ন কবরে উজ্জ্বলতা ও জালালী দেখা দিয়েছে। আহমদ উল্লাহ যিনি, তিনি সমস্ত অলিদের সর্দার যাহার ‘ছিফত’ উপাধি গাউছুল আজম।”-মরহুম মওলানা জুলফিকার আলী সাহেব।

“হযরত শাহ্‌ আহমদ উল্লাহ কাদেরী,যিনি ভূখন্ডের পূর্বাঞ্চলে বিকশিত কুতুবুল আক্‌তাব। তিনি মাইজভান্ডার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত গাউছুল আজম নামধারী বাদশাহ।–রসুলুল্লাহ (সাঃ) এঁর নিকট বেলায়তে ওজমা বা শ্রেষ্ঠ বেলায়তের দুইটি সম্মান প্রতীক বা তাজ ছিল। এই সম্মান প্রতীক বা তাজ দুইটির মধ্যে একটি হযরত শাহ্‌ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এঁর মস্তক মোবারকে নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত। অন্যটি বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর মস্তক মোবারকে প্রতিষ্ঠিত। যেই কারণে তিনি পূর্বাঞ্চলে আবির্ভূত গাউছুল আজম বলিয়া খ্যাত,সেই কারণে তাঁহার রওজা মোবারক মানব-দানবের জন্য খোদায়ী বরকত হাছেলের উৎসে পরিণত হইয়াছে। ”- , ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা আলহাজ্ব আল্লামা সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরী ছাহেব। 
ব্যক্তিগত জীবনহযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১২৭৬ হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার স্ত্রী মারা যান। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিয়ে করেন। ১২৭৮ হিজরী সালে তার প্রথম মেয়ে সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু মেয়েটি চার বছর বয়সে মারা যায়। এরপর তার আরোও একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করে অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। অতঃপর ১২৮২ হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহণ করেন। তার দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে মৃত্যুবরণ করেন।

উত্তরাধিকারী খলিফা নির্ধারণ ও গদী অর্পণঃ গাউছুল আজম হযরত মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) তাঁর নশ্বর জীবনের শেষ দিকে এক জুমাবারে এলাকার সমাজপতি ও জনগণের উপস্থিতিতে তাঁর পবিত্র হুজুরা শরীফ দোয়ার মেহরাবে নিজ পুত্র বংশীয় আদরের নাতি সাজ্জাদানশীনে গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) -কে নিজ গদী শরীফ এর স্থলাভিষিক্ত করে খেলাফত দান করেন।
মাইজভান্ডারী তরিকা ইসলাম ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার ধারাবাহিকতায় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কোরান ও হাদীসের শিক্ষাকে অনুসরণ করে গাউছুল আজম হযরত মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) ও গাউছুল গোলামুর রহমান প্রকাশ বাবাভাণ্ডারীর আধ্যাত্মিক শক্তি ও শিক্ষাকে ধারণ করে মাইজভান্ডারী তরিকা প্রচারের সূচনা হয়। হযরত মওলানা সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) বলেন, “ এই ত্রিবিধ বেলায়তী ধারা ,নবুয়তী ধারার সমন্বয়ে অর্থাৎ জাহের বাতেন তা’লীমে এরশাদীসহ শরীয়ত ,তরীকত ,হাকীকত ও মায়ারেফত প্রভাবে ও সংমিশ্রেণে মাইজভান্ডারী তরীকারূপে মহা সাগরের উৎপত্তি।”  এই তরিকা ছিলছিলার দৃষ্টিকোণে কাদেরীয়া তরিকার সাথে সম্পর্কিত। অন্যান্য তরিকার আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যগুলো মাইজভান্ডারী তরিকায় সন্নিবেশিত হয়েছে। এই তরিকা কোরান ও হাদিসের শিক্ষাকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে। একই সাথে এই তরিকা অসাম্প্রদায়িক ,উদার,নৈতিকতা, ধর্ম-প্রাধান্যসম্পন্ন,শ্রেণি-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী।এই তরিকার মূল হল প্রেম ও আদব। মানুষের মনে ঐশী প্রেম জাগ্রত করে সুন্দর ও ন্যায়ের পথে জীবন যাপনে মানব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে মানবতার ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়। আমাদেকে এই মহান আউলিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলকে পাওয়ার সেই তাওফিক দান করুক। আগামী ১০ই মাঘ ২৪ শে জানুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার তথা ৩দিন ব্যাপী এই মহান আউলিয়ার ওরছে পাক সকল মন্জিলে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে।তথ্যসংগ্রহঃ গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও উইকিপিডিয়া।

লেখকঃ মাঈন উদ্দীন রুবেল। প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক ও ব্যাংকার।


ট্যাগ :