মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল আজিজ:
মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। এসকল নবী -রাসূলদেরকে গাইডবুক হিসেবে সহীফা ও কিতাব দিয়েছেন। এসব কিতাব সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব হচ্ছে আল-কোরআন। পূর্ব পূবর্বর্তী কিতাবসমূহের উপরে ঈমান আনা এবং আল-কোরআনকে মেনে চলা মুসলিমদের উপরে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। আল-কোরআন এসেছে বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াতের সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমযান মাস, যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা আল-বাকারা-১৮৫) হিদায়াতের এই কিতাব আল -কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ করা হয়েছে। নিম্নে আল-কোরআন শিক্ষা করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেআলোচনা করা হলো আল-কোরআন শিক্ষা করা ফরজ আল-কোরআনের প্রথম বাণী হচ্ছে, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক-১)
এখানে ইক্বরা, অর্থ: পড়ো। এ আয়াতের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসমুলিমকে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন তোমরা যিনার জন্য, বোঝার জন্য এবং সঠিকটা মেনে চলার জন্য পড়া-লেখা করো, অধ্যয়ন করো। অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। আর এটার বাস্তব নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল (সা.)।
পবিত্র আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলসূ (সা.) বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ।’ (সূনান ইবনে মাজা) জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আল-কোরআন শিক্ষা করাও প্রত্যেক মুসলমানের উপরে আল্লাহ ফরজ করে দিয়ে ছেন। রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলসূ (সা.) বলেছেন, তোমরা কোরআন ও ফারায়েজ (উত্তরাধিকার আইন) শিক্ষা করো এবং মানুষদেরকে শিক্ষা দাও কেননা আমাকে উঠিয়ে নেয়া হবে।’ (সূনা সূ ন আত-তিরমিযি) তাই, আমাদের উপরে কর্তব্য আল-কো রআন ও ইলমে ফারায়েজ (উত্তারাধিকার আইন) শিক্ষা করা এবং এর আলোকে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্র পরিচালনা করা।
আল-কোরআন শিক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত আল-কোরআন অধ্যয়ন করা, কোরআন জানা-বোঝার চেষ্টা করা পৃথিবীর সকল কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কাজ। কারণ এ কো রআনের মধ্যে রয়েছে মানুষের জীবন পরিচালনা পদ্ধতি, হিদায়াতের সঠিক পথ। প্রত্যেক কাজ শুরু করার সময় রাসূল (সা.) বিসমিল্লাহ পড়ে (আল্লাহর নাম নিয়ে) শুরু করার কথা বলে ছেন। তবে যেকোনো কাজ শুরু করার আগে ‘আউযুবিযু ল্লাহি মিনাশ শাইতারিজ রাজীম’ অর্থাৎ শয়তা নের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেননি। তবে একটি কাজ করার আগে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন, সেটা হলো আল-কোরআন তিলাওয়াত বা অধ্যয়নের সময়। এ সম্পর্কে আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সুতরাং যখন তুমি কোরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও।’ (সূরা আন-নাহল-৯৮)
হাদিস হতে কিছু কথাঃ-
রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْاٰنَ وَعَلَّمَهٗ
‘যে কুরআন শরীফ শিক্ষা করে ও শিক্ষা দেয় সে-ই তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ বুখারী
মুসলিম শরীফে আছে :
اَفَلَا يَغْدُوْا اَحَدُكُمْ اِلٰى الْمَسْجِدِ فَيَتَعَلَّمُ مِنْ كِتَابِ اللهِ اٰيَتَيْنِ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌلَّهُ مِنْ ثَلِاثٍ وَاَرْبَعٌ خَيْرٌلَّهُ مِنْ اَرْبَعٍ وَمِنْ اَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْاِبِلِ.
“তোমাদের মধ্যে কেহ মসজিদে গিয়ে কুরআনের দুইটি আয়াত কেন শিক্ষা লাভ করে লয় না? কুরআনের দুইটি আয়াত শিক্ষা করা দুইটি উট অপেক্ষা অধিক ভাল। এইরূপে তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা এবং চারটি আয়াত চারটি উট অপেক্ষা অধিক ভাল। এমনিভাবে যত সংখ্যক আয়াত হবে, তত সংখ্যক উট হতে অধিক ভাল।”
আল-কোরআনের এ বক্তব্য থেকে জানা যায়, শয়তান সকল কাজেই বান্দা কে কুমন্ত্রণা দেয়। তবে কোরআন অধ্যয়নের সময় শয়তান সবচেয়ে বেশি কুমন্ত্রণা দিয়ে মনোযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করে। কোরআনের কথা যেন মানুষ বুঝতে না পারে, সে জন্য শয়তান শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে থাকে। মুসলমানরা কোরআন থেকে দূরে সরে থাকলে শয়তান বেশি খুশি হয়। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা কোরআন অধ্যয়নের সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলেছেন।
এজন্য আমাদের উচিত আল- কোরআন জানা ও বোঝার জন্য সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করা। আল-কোরআন হিদায়াতের একমাত্র কিতাব আল-কোরআন হচ্ছে বিশ্ব মানবাতার জন্য হিদায়াতের একমাত্র কিতাব। এই কোরআনই বিশ্বের সকল মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে, হিদায়াতের আলোয় আলোকিত করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় এ কোরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরপুস্কার। আর যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না আমি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।’ (সূরা বনি ইসরাইল- ৯-১০)
‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন।’ (সূরাআল-মায়েদা- ১৫-১৬)