মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল আজিজ:
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ নিজে দয়ালু। সেহেতু তিনি চান বান্দা একে অপরের ওপর দয়ালু হোক। এক বান্দা অপর বান্দার অভাবের দিনে তাকে সাহায্য করুক। সেজন্য ইসলাম অনুসারীদের দয়ালু হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
সমাজের অপর ভাইয়ের প্রতি সহমর্মিতার জন্য তাদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে বলেছে। দান প্রকাশ্যে বা গোপনে প্রদানের ব্যাপারে আল কোরআনে বলা হয়েছে- ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তা ভালো, আর যদি গোপনে তা কর এবং অভাবীকে দাও, তবে তা হবে তোমাদের জন্য আরও ভালো; এতে আল্লাহ তোমাদের কিছু কিছু পাপ মুছে দেবেন।
’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭১)
প্রকাশ্যে দান করা ভালো; এটা এ জন্য যে এ দানের দেখাদেখিতে অনেকেই দান করতে উৎসাহিত হতে পারে। আর গোপনে দান করা আরও ভালো, কারণ এভাবে দান করলে দানকারী লোক-দেখানো থেকে সহজেই বাঁচতে পারে এবং দানগ্রহীতারা যারা চায় না লোকজন এ দানের কথা জেনে তাদের হেয় মনে করুক, তা থেকে তারা রক্ষা পেতে পারে।
এ আয়াত থেকে দেখা যায় দান করলে আল্লাহ কিছু কিছু পাপ মোচন করে দেবেন। এখানে উল্লেখ্য, কবিরা গুনাহ তওবা করা ছাড়া মাফ হয় না।
দান করলে আল্লাহ পরকালে আরও কী কী উপকার প্রদান করবেন সে ব্যাপারে কোরআনে বলা হয়েছে- ‘যারা দিন-রাত প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের ধন-সম্পদ দান করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে; তাই তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কোনো দুঃখও পাবে না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৪)
কেয়ামতের দিন গোপনে দানকারী আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সাত শ্রেণির লোক (আল্লাহর) আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। এর মধ্যে এক শ্রেণি হচ্ছে, একজন লোক এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করে বাম হাত তা জানতেই পারে না। ’ (বুখারি, মুসলিম)।
দান জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর। ’ (বুখারি, মুসলিম)।
দান করার দ্বারা শুধু যে পরকালেই উপকার পাওয়া যাবে তা নয়, এর দ্বারা ইহকালেও উপকার পাওয়া যায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার ইহকাল ও পরকালের সব বিষয় সহজ করে দেবেন। ’ (মুসলিম)
দানের দ্বারা অভাবী মানুষ অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যা পায় তার দ্বারা তাদের অসহায়ত্ব দূর করার পথ সুগম হয়। এটা সমাজে সুখ-শান্তি স্থাপনে ও বজায় রাখতে এবং সামাজিক পরিবেশ ভালো রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া দানের দ্বারা স্থাপিত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাসপাতাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান জনগণের তথা দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখে। অর্থাৎ দানের দ্বারা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গই উপকৃত হয় না, এর দ্বারা সমাজ ও দেশও উপকৃত হয়।