স্টাফ রিপোর্টারঃ
সৌদি আরব শর্ত জুড়ে দিয়েছে- যারা করোনার টিকা নিয়েছেন কেবল তারাই যেতে পারবেন ওমরাহ পালন করতে। তবে এখানেও আছে দুটো বড় ‘যদি’। যারা শুধু সিনোফার্মার টিকা নিয়েছেন তাদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দেয়নি সৌদি সরকার। তবে সিনোফার্মার টিকা গ্রহণকারীরা বুস্টার ডোজ হিসেবে অন্য কোনও টিকা নিলে আবার ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন।
এদিকে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে চীনের তৈরি সিনোফার্মার টিকা দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে না বুস্টার ডোজ। ফলে টিকা জটিলতায় আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের ওমরাহ যাত্রা। অন্যদিকে নানা বিধিনিষেধের কারণে ওমরাহ পালনের ব্যয়ও বাড়ছে। অনুমতি মিললেও ব্যয় বৃদ্ধি ও বিধিনিষেধের কারণে দুশ্চিন্তায় এজেন্সি মালিকরা।
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বিদেশিদের ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি দেশটি। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে ১ মুহররম থেকে বিদেশিদের ওমরাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে যেতে শুরু করেছেন ওমরাহ পালনকারীরা। তবে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনকারীদের সৌদি যাত্রা শুরু হতে পারে সেপ্টেম্বর থেকে। তবে বিধিনিষেধের কারণে পর্যাপ্ত ওমরাহ পালনকারী পাওয়া যাবে না বলেও শঙ্কা এজেন্সিগুলোর।
সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের জন্য ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের ২ ডোজ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ ডোজ, মডার্নার ২ ডোজ কিংবা জনসন অ্যান্ড জনসনের ১ ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন তাদের অনুমতি দেবে সৌদি আরব। এতে আরও বলা হয়, যদি কেউ চীনের সিনোফার্মার টিকা নেয়, তবে বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার, অক্সফোর্ড, মডার্না, জনসনের ডোজ নিলেই অনুমতি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৩ কোটি ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭২০ ডোজ। ২১ আগস্ট পর্যন্ত ২ কোটি ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৯ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, চীনের তৈরি সিনোভ্যাক, ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন। এরমধ্যে অক্সফোর্ডের ১ কোটি ৯ লাখ ৮৮ হাজার ডোজ, সিনোফার্মার ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ৩৫ ডোজ, ফাইজারের ৯৪ হাজার ২৬০ ডোজ, মর্ডানার ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৪ ডোজ দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মী ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে ফাইজার ও মডার্নার টিকা।
হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, সরকার ব্যাপক হারে সিনোফার্মার টিকা আমদানি করছে এবং দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্য টিকার বুস্টার ডোজ ছাড়া সৌদি ওমরাহর অনুমোদন দিচ্ছে না। শুধু ওমরাহ নয়, আগামী বছর হজের ক্ষেত্রেও এটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে যারা আগে অক্সফোর্ডের টিকা নিয়েছেন তারা সবাই যে ওমরাহ পালনে আগ্রহী তাও নয়। ফাইজার ও মডার্নার টিকা বেশিরভাগ পেয়েছেন বিদেশগামী কর্মীরা। ফলে ওমরাহর যাত্রী পাওয়া গেলেও টিকার জন্য অনেকেই আটকে যাবেন।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এখনও সমাধান মেলেনি। এ জটিলতার নিরসন না হলে আগ্রহীদের ওমরাহ পালন সম্ভব হবে না। আমরা বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করছি।’
অন্যদিকে সৌদি আরবের নানা বিধিনিষেধ আরোপে ওমরাহর খরচও বাড়বে। এজেন্সিগুলো জানিয়েছে এখন বিমানভাড়া অনেক বেড়েছে। আগে হোটেলের এক রুমে চার থেকে ছয়জন ওমরাহ যাত্রী থাকার সুযোগ থাকলেও এবার তা সম্ভব নয়। সৌদির শর্তানুযায়ী দুজনের বেশি এক রুমে থাকা যাবে না। পরিবহন, ভিসা প্রসেসিং অন্যান্য খাতেও খরচ বেড়েছে। ফলে ১ লাখ ৫০ হাজার নিচে ওমরাহ পালনের প্যাকেজ করা সম্ভব হবে না।
হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে খরচ বাড়বে। এজেন্সিগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে।