স্টাফ রিপোর্টারঃ
শারদীয় দুর্গোৎসবে মহানবমী তিথিতে ষোড়শ উপচারে দেবীর বন্দনা ও মহাস্নান-যজ্ঞ, আর সন্ধ্যায় আরতি বন্দনায় আনন্দময়ীর অর্চনা করেছেন সারাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপগুলোতে ছিল ভিড়। পৃথিবীর দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে আগামী দিনগুলোতে শান্তির কামনায় দেবী দুর্গতিনাশিনীর সামনে করজোড়ে প্রার্থনা করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এ দিন দুপুর ২টা ৪ মিনিটে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের অর্ধেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে যায়। তবে তাতে পূজা উদযাপনে ছেদ পড়েনি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দরা।
এ বিষয়ে তারা বলেন, “বিভিন্ন এলাকার পূজা উদযাপন কমিটির সাথে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করে জানতে পেরেছি, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। জেনারেটরের মাধ্যমে মণ্ডপগুলোতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
বিভিন্ন মন্দিরে সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতার সময় জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল ছিল বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর মন্দির-মণ্ডপগুলোতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় নবমীর আনুষ্ঠানিকতা।
দুপুরে নগরীর জেমসেন হল মন্দিরে দুই মেয়েকে নিয়ে পূজা করতে এসেছিলেন সত্যজিৎ কর। এ বছর মার্চ মাসে হারিয়েছেন মাকে। মায়ের আত্মার সৎগতি কামনা করে প্রার্থনা করেছেন দেবী দুর্গার কাছে।
সত্যজিৎ বলেন, “এবছর পূজার আমেজ তেমন নেই আমাদের। তবুও মেয়েদের নিয়ে এসেছি দেবী দুর্গার দর্শনে। দেবী মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি- আমার মায়ের জন্য।”
সত্যজিৎ করের মেয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী পূজা কর বলেন, “আমাদের পরিবারের মঙ্গল কামনায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি। মা আমাদের সব কষ্ট কমিয়ে দেবেন।”
মন্দির প্রাঙ্গনে বিকাল থেকেই ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়৷ অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন সন্ধ্যা আরতির।
মন্দিরে পূজা দেখতে আসা সজীব দে, পিন্টু দে, সমীরণ দে, শেফু দাশ, নয়ন পাল, নারায়ণ বর্ম বলেন, “সন্ধ্যা আরতির জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিবছর জেমসেন হল এবং কৃষ্ণকুমারী স্কুলের মন্ডপে সন্ধ্যারতি দেখার মতো সুন্দর হয়। তাই আমরা এখানে এসেছি আরতি দেখতে।”
এ বছর দেবী দুর্গার কাছে কী প্রার্থনা করেছেন, তার জবাবে তারা বলেন, “নিজের জন্য তো কতকিছুই চেয়েছি! পাশাপাশি পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক, সবাই আনন্দের সাথে সামনের দিনগুলো কাটাক- এই আশাই করেছি মায়ের কাছে।”
প্রতিবছর দুর্গোৎসবে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপগুলো সরগরম হয়ে উঠে দর্শনার্থীদের ভিড়ে। এবছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নবমীর দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিড় কিছুটা কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে অলিগলি আর পূজামণ্ডপগুলো। পূজাকে কেন্দ্র করে অলগলির ছোট ছোট দোকানগুলোও জমজমাট হয়ে উঠতে দেখা যায়। তবে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার পর ওই এলাকার কয়েকটি মণ্ডপে জনাসমাগম কমে যায়।
পাথরঘাটার একটি পূজামণ্ডপে পূজা করতে এসেছেন এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী নিশি সাহা। চট্টগ্রাম শহরের একটি স্কুল থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।
নিশি বলেন, “পরীক্ষা বেশ ভালোই দিয়েছি৷ পরীক্ষার পর মামার বাড়িতে চলে এসেছি পূজা দেখার জন্য। মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি যেন পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হয়।”
গত দুবছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে উৎসব সেভাবে না জমলেও এবার দুর্গা পূজা বেশ উপভোগ করছেন বলে জানান নিশি।
এবছর চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এখনও পর্যন্ত পূজা চলাকালীন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি৷ এবার সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা উদযাপিত হচ্ছে৷ চট্টগ্রাম মহানগরেও বেশ সুশৃঙ্খলভাবে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। এবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ তৎপর ছিল। আশা করছি আগামীকাল বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত সবকিছু সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হবে।”
দুইবছর করোনাভাইরাস মহামারীর বিধিনিষেধের পর এবছর প্রতিটি মণ্ডপে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে বলে জানান পূজা উদযাপন পরিষদের এই নেতা।
গত বছরের চেয়ে এবার বেড়েছে মণ্ডপের সংখ্যাও। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবীবন্দনায় মেতেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এবার প্রায় ৩২ হাজার ১৬৮ মণ্ডপে দুর্গা পূজা হচ্ছে। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৪১টি মণ্ডপে, যা গতবারের চেয়ে ৬টি বেশি। গতবার সারাদেশে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি।