স্টাফ রিপোর্টারঃ
নবমী মানেই মন খারাপ বাঙালি হিন্দুদের। আজ মর্ত্য ছাড়বেন দুর্গতিনাশিনী। ফিরবেন কৈলাসে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণ এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ সমাপন ঘটবে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার। আজ শুভ বিজয়া।
শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক আর বলিদানের মাধ্যমে দেবীর পূজা হবে। তাই ঢাকের বোলে নিনাদিত হচ্ছে—‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন’। বহু মণ্ডপের লাউড স্পিকারে মন্দ্রিত হচ্ছে—‘নবমী নিশি যেন আর না পোহায়, তোকে পাবার ইচ্ছা মাগো কভু না ফুরায়…। সমসনাতন বিশ্বাসে-বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে উমাদেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃণ্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে আজ ফিরে যাবেন কৈলাস শিখরে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।’ ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমাঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে পিতৃগৃহে আসেন গজে চড়ে। আজ বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেবেন আবারও নৌকায়।
আজ (বুধবার) সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নামবে ভক্তদের ঢল। ঢাক আর শঙ্খধ্বনি। টানা মন্ত্র পাঠ। উলুধ্বনি আর অঞ্জলি। সঙ্গে ঢাকের বাদ্য, নাচ, সিঁদুর খেলা। ধান, দূর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানাবে ভক্তরা। আজ অনেকে উপবাস করবেন। একদিকে বিদায়ের সুর, অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপে চলবে আবির উৎসব। সকালে দেওয়া হবে দর্পণ ঘট বিসর্জন। রাজধানীতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বঙ্গভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন আলোকসজ্জিত করা হবে।
এদিকে পূজার মধ্যেই গতকাল বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। নবমীতে আঁধারে ডুবল বাংলাদেশ। জানা গেছে, গ্রিড বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫ মিনিট নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আঁধারে ডুবে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। পূজার মধ্যে এই পরিষেবা বিপর্যয়ের কারণে মণ্ডপে মণ্ডপে আলো নিভে যায়। জেনারেটরের মাধ্যমে আলো দীর্ঘক্ষণ জ্বালানো সম্ভব ছিল না। নবমীর দিন এ হেন বিপর্যয়ে বিষাদের ছায়া পড়ে হিন্দুদের মধ্যে।
এদিকে গতকাল নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহূতি দেওয়া হয়। সকালে নবমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পূজা শেষে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ভোগ আরতি। বাসা-বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
এ বছর সারা দেশের ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে এবারে মণ্ডপের সংখ্যা ২৪১টি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় রাজধানীর সব পূজামণ্ডপের জন্য বাড়তি সতর্কতা জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। যেসব মণ্ডপে জেনারেটর নেই, সেসব মণ্ডপে সন্ধ্যার আগেই জেনারেটরের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসিটিভি সচল রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পোশাকে ও সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এ কে এম হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা হওয়ায় পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিএমপির প্রত্যেকটি থানা, ডিবি ও ক্রাইম ডিভিশনকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।