মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল আজিজ:
আজ পবিত্র শবেমেরাজের রাত। শব শব্দটি ফারসি অর্থ রাত ও আরবি মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ বা ঊর্ধ্বগমন। অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ইসলামের ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, রজব মাসের ২৬ তারিখে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে হজরত উম্মে (রা.)-এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন।
তাঁর অর্ধনিদ্রা অবস্থায় জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন এবং প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় গমন করেন। সেখানে রসুল (সা.) নবীদের জামাতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বালোকে গমন করেন।
বুখারি শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-সহ সবার সঙ্গে সালাম ও কথাবার্তা বলেন।
অতঃপর তিনি বায়তুল মামুর গেলেন, বাইতুল মামুর হলো প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় হাজার ফেরেশতা আসেন ও প্রস্থান করেন, তাঁরা দ্বিতীয়বার আর আসার সুযোগ পান না। অতঃপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহার কাছে গেলেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই।
নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১। আজ এই রাতটি নবী প্রেমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি রাত। কেননা মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী তাঁর হাবিবকে সশরীরে মেহমান বানিয়ে আরশ মহল্লায় ভ্রমণ করিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করছেন।
যা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো মুক্তার তৈরি আর তার মাটি হলো মেশকের। বুখারি।
মহিমান্বিত এই রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন একদল লোকের তামার নখ। তারা সেই তামার নখ দিয়ে নিজেরা নিজেদের গাল, বুক ও শরীরে আঁচড় কাটছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে জিবরাইল (আ.) এরা কারা?
হজরত জিবরাইল (আ.) উত্তরে বললেন, এরা ওই সমস্ত লোক, যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের সম্ভ্রমে আঘাত হানত। অর্থাৎ গিবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। মুসনাদে আহমাদ।
মেরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা, লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। প্রিয়নবী (স.) যে আল্লাহ তাআলার কাছে কত দামি ও মর্যাদার অধিকারী, তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁকে এমন মর্যাদা দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবীকে দান করা হয়নি। এ ঘটনার ফলে মুমিনের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী (স.)-এর ভালোবাসা সুগভীর হয়।
মেরাজের ঘটনা কোন সুরায় আছে
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মেরাজ কোরআন-হাদিস ও ইজমায়ে উম্মত-এর অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। মেরাজ সত্য-এই বিশ্বাস রাখা ফরজ। মেরাজের রাতে নবীজির বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত সফরের কথা সুরা বনী ইসরাইলের শুরুতে এবং ঊর্ধ্ব জগতের সফরের কথা সুরা নাজমের ১৩ থেকে ১৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। মেরাজ তথা ঊর্ধ্বলোকে গমনের কথা হাদিস দ্বারা আর ইসরা তথা নৈশভ্রমণের কথা কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। ইসরাকে অস্বীকারকারী কাফের হবে, কিন্তু মেরাজকে অস্বীকারকারী কাফের হবে না, তবে মহাপাপী হবে।
২০২৩ শবে মেরাজ কবে
বাংলাদেশে ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার থেকে হিজরি মাস রজবের গণনা শুরু হয়েছে। রজব মাসের ২৭ তারিখ শবে মেরাজ। সেই হিসেবে ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।