কামাল পারভেজ :
সাংবাদিকতার আবিষ্কার প্রিন্ট পত্রিকা দিয়ে। কয়েকশত বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে, তৎকালীন হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ, হাতে টাইপ করে পত্রিকা প্রকাশ, এভাবে শত বছর পার করে উনিশ-বিংশ শতাব্দীতে সাদা-কালো ছাপা মেশিন তৈরি। কালের বিবর্তন ঘটিয়ে আজ আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশে। তাও আবার ইউরোপ দেশে শত বছর পর এবং পার্শ্ববর্তী দেশে ৫০ বছর পর।
সাংবাদিকতার পথ প্রদশর্নের মানেই ছিলো প্রিন্ট পত্রিকা। দেশ-বরণ্য বিখ্যাত সাংবাদিকরা এই প্রিন্ট পত্রিকার মাধ্যমে তাদের জীবনের ছন্দ-পতন ঘটায়। আর এখন সাংবাদিকতার ধরন বহুবিধ বহু বিস্তৃত।
বর্তমানে যেমন – প্রিন্ট পত্রিকা, ইলেকট্রনিক-চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেইজ সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে আসছে।
এদিকে আবার সোশাল মিডিয়া (ফেসবুক) বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের বিপরীতে শক্তিশালী বলে প্রকাশ পায়। তারপরও গণমাধ্যমের স্রোত হারিয়ে যাওয়াটা এতো সহজ নয়। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের পরিচয় বহন করে অনেকের রুজি-রোজগার। আবার গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধ করা এটাও চতুরবাজদের কাজ। সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করার মতো এখন আর ২-৪ জন খুঁজে পাওয়া যাবে না। একরকম বাঁচালের প্রলাপ চলে এই জায়গাটাতে, কাজ নয় কথায় পটু। এসব পটুয়াদের কথা শুনলেই মনে হবে বিলেত থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে, সেই সব জান্তা। মুখে এমন ভাবে সুর তুলবে সততার পরিচয়টা যেন তারই আছে, অন্যরা সব অসৎ উপায়ে চলে। ভঙ্গিমাটা এমনই যেন অর্থমোহী নয়, অর্থ হতে একশত গজ দূরে বসবাস। বিচলিত হওয়ার ও কোন কারণ নেই। অর্থমোহী নয় তাতে কি হয়েছে, গন্ধ শুঁকতে তো নিষেধ নেই। টেবিলের নিচ দিয়ে হাত লম্বা করে নাগাল পায়নি তাতে কি, ঐ যে গন্ধ শুঁকে শুঁকে পৌঁছে যাবো পকেটের কাছে। এসব সাংবাদিকরা আবার একটা বিশেষণ পদ-পদবীর জন্য মরিয়া থাকে। কাজের বিষয়ে লেজ-গোবরে হলেও কি হবে অভিজ্ঞতার মাপ-কাঠি ও চাপাবাজীতে সে সেরা। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দায়িত্বটা কর্তৃপক্ষ যখন এসাইনমেন্ট হিসেবে দেয় তখন সিলিং ফ্যানটা হাই বোল্টের শেষ গতিতে চালিয়ে দেয়া হয়, ঐ যে মাথায় উপর কাঁচা বেলটাই পড়ে গেলো, পাকা হওয়ার সময় পেলোনা। কারণ অন্যের লেখা ধার করা, কপি পেস্ট করে জীবনটাকে চালিয়ে বাহবা নিচ্ছি। কচ্ছপের গতিতে দৌড়ঝাঁপ ছায়া সাংবাদিকতা চললেও মাঝে মধ্যে বাঘের গর্জন দিয়ে ফায়দা লুটে নিয়ে সুবিধা ভোগীদের তালিকায় নামটা রাখা হয়েছে এটাই যথেষ্ট। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অথবা দূর্নীতির বিরুদ্ধে লেখা যাবেনা, তবে মুখে চাপাবাজী করে প্রতিবাদের ভাষায় বুঝিয়ে নিজের পকেট ভারী করাটাই বাঁচাল সাংবাদিকের কাজ।
লেখকঃ বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি ও লেখক এবং
ব্যুরো চীফ (চট্টগ্রাম),
দৈনিক আমাদের নতুন সময়।