স্টাফ রিপোর্টার:
বন্যা ও বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্র-জনতাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এমন এনজিওগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ যমুনার গেটে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চলমান বন্যা পরিস্থিতির উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয় করবে বেসামরিক প্রশাসন। এ মতবিনিময় সভায় বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি এ দুই পর্বের কাজে কীভাবে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে এনজিও, স্বেচ্ছাসেবক ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, এ মতবিনিময় সভায় ৪৪টি এনজিওকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সভায় ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় এনজিও এবং উপকূলভিত্তিক এনজিও’র প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সমন্বিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা বলেছেন। উনি চাচ্ছেন এনজিওগুলো যে কাজটা করবে সেটাও যেন সমন্বিতভাবে করে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় এনজিওগুলোর সব সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় এনজিওগুলোকে বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, এনজিওগুলো বাংলাদেশের শক্তি। তরুণরা যে স্বপ্ন আমাদের দেখালো, সেই স্বপ্ন আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা এটা করতে পারবো।
পানি নামার পরের কাজটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, অনেকে বাসার কিছুই নেই, পানিবাহিত রোগ হয়। কীভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় প্রধান উপদেষ্টা সেভাবে কাজ করতে বলেছেন।
ড. ইউনূস বন্যা সংকট মোকাবিলায় ছাত্র-জনতার ঐক্য এবং উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আমরা সবাই অভিভূত, যেভাবে দেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় স্পিরিট দেখিয়েছিল সেভাবেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আপনারা দেখবেন গ্রামে গ্রামে টাকা, ত্রাণ উঠাচ্ছে। আর শুক্রবার টিএসসিতে যেটা দেখেছেন এটা কিন্তু খুবই অসাধারণ দৃশ্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তরুণদের যে উদ্যোগ, প্রেরণা তার সঙ্গে বাংলাদেশের সবাই যেন একীভূত হয়ে বন্যা মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবাই মিলে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে।
যোগাযোগ অবকাঠামো পুনঃস্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সচিব বলেন, কমিউনিকেশনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে। মোবাইল ফোন কোম্পানির সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে। ডিজেল পাঠিয়ে টাওয়ারগুলো যেন কোনোভাবে চালু করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে, যতটা দুর্গম এলাকায় যাওয়া যায়, যতদ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা যায়। বিদ্যুৎ চালু হলে নেটওয়ার্কও চালু হবে।
সরকারি এবং বেসরকারি সেক্টর একসঙ্গে কাজ করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, সমন্বয়ের একটা বড় কাজ করতে হবে, বিশেষ করে জাতীয় পর্যায়ে, একই সঙ্গে জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে। সেনাবাহিনী, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। তাদের সবাইকে যুক্ত করা যায়, ত্রাণ কাজটা যাতে সমন্বিত উপায়ে করা যায়।
আসিফ সালেহ বলেন, সরকারের একটা মেকানিজম কাজ করে। তার সঙ্গে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে। নতুন একটা পরিকল্পনা ও কাঠামোর মাধ্যমে এটা করতে পারবো। এছাড়া কাজের ক্ষেত্রে একটা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন হবে। প্রবাসীরা আগ্রহী, তাদের মাধ্যমে একটা তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা থাকবে। এসব বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।