নিউজ-ডেস্ক:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসসবুক থেকে ফাঁস হয়ে গেছে ২৬ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর আইডি, ফোন নম্বর, নামসহ স্পর্শকাতর তথ্য। এসব তথ্য অনলাইনে একটি ডাটাবেজ আকারে রাখা ছিল। ফাঁস হওয়া এসব তথ্য স্প্যামিং ও ফিশিংয়ের মতো প্রতারণামূলক কাজে ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কম্পারিটেকের তথ্যানুযায়ী, সম্প্রতি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বব ডিয়াচেঙ্কো ফেসবুক থেকে ফাঁস হওয়া তথ্যের ওই ডাটাবেজ খুঁজে পান। ওই ডাটাবেজ ৪ ডিসেম্বর অনলাইনে ইনডেক্স করা হয়। তবে এখন ওই ডাটাবেজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কম্পারিটেকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ওই ডাটাবেজ সরিয়ে ফেলার আগ পর্যন্ত তা একটি হ্যাকার ফোরামে ডাউনলোডযোগ্য ফাইল হিসেবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল।
এবারের তথ্য ফাঁসে যাঁদের একাউন্ট থেকে তথ্য সরানো হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক আইডি, ফোন নম্বর ও পূর্ণ নাম।
ফেসবুকের ক্ষেত্রে তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ বছরই বেশ কয়েকবার ফাঁস হয়েছে ফেসবুকের তথ্য। গত নভেম্বরেই ফেসবুক ও টুইটার থেকে ক্ষতিকর থার্ড পার্টি এপের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে হাজারো ফেসবুক গ্রুপ সদস্যদের তথ্য ফাঁস নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে লাখো ফেসবুক একাউন্টের সঙ্গে থাকা মোবাইল নম্বর একটি অনলাইনে ডাটাবেজে পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত তথ্য, নাম, পরিচয় ও নানা স্পর্শকাতর তথ্য ছিল ওই ডাটাবেজে।
গবেষকেরা বলছেন, অরক্ষিত পাবলিক ডাটাবেজগুলো ফেসবুকের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। গত এপ্রিল মাসে আপগার্ডের নিরাপত্তা গবেষকেরা ৫৪ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য, লাইকসহ নানা তথ্য খুঁজে পান আমাজনের ক্লাউড সার্ভারে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ এনালিটিকার বিরুদ্ধে ফেসবুক থেকে ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ওঠে। যা পরে কেমব্রিজ এনালিটিকা কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এছাড়া প্লেইন টেক্সট ফরম্যাটে লাখো ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে রাখার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ফেসবুক।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকের সাম্প্রতিক এ তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ফেসবুকের তথ্য সুরক্ষায় নেয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠেছে। এছাড়া ব্যবহারকারী ফেসবুকে কী কী তথ্য দেবেন তা নিয়েও তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সন্দেহজনক ও প্রতারণাপূর্ণ টেক্সট মেসেজ পেলে সতর্ক থাকুন।
এ বিষয়ে ফেসবুকের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, তাঁরা বিষয়টি দেখছেন। তবে তাঁদের ধারণা, এসব তথ্য তাঁদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার আগে সংগ্রহ করা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ফেসবুকসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একই পাসওয়ার্ড সব একাউন্টে ব্যবহার করবেন না। অনলাইন প্রাইভেসি সুরক্ষায় নিয়মিত পাসওয়ার্ড হালনাগাদ করুন। পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা অনেকের জন্য ঝামেলার মনে হলেও এটি অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনায় সুরক্ষিত থাকবে একাউন্ট। এ কারণেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি সেটিংসে সব সময় ‘ফ্রেন্ডস’ ও ডু ইউ ওয়ান্ট সার্চ ইঞ্জিনস আউটসাইড অব ফেসবুক টু লিঙ্ক টু ইউয়োর প্রোফাইল? প্রশ্নে ‘নো’ দিয়ে রাখতে হয়।