স্টাফ রিপোর্টার:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু মহল কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।
বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবনযাত্রা দিতে শুরু করেছি। অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদার আসনে আসীন করতে সক্ষম হয়েছি। তারপর আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বস্তি-শান্তিতে ফিরে তখন তাদের মাঝে এমন কোনো ঘটনা ঘটে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটা পরিপত্র জারি করে সরকার। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারি পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় ছাত্ররা কোটা বাতিলের দাবি নিয়ে আবারো আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহশীলতার পরিদর্শন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদানের ইচ্ছাপোষণ করে সেক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। যে ঘটনা ঘটেছে সেটা কাম্য ছিল না। চট্টগ্রামের বহুতল ভবন থেকে সন্ত্রাসীরা ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। অনেক ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের ওপর লাঠিপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তাদের একজন মৃত্যুবরণ করেছে এবং অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ঢাকা, রংপুর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। সাধারণ পথচারী ও দোকানেদারকে আক্রমণ করা হয়। এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা প্রদান করা হয়। মেয়েদের হলে ছাত্রীদের আক্রমণ করা হচ্ছে এবং লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হুমকি এবং আক্রমণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তাদের সঙ্গে এই সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যারা শহীদ হয়েছে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য যা করা দরকার তা আমি করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি— যারা সন্ত্রাস, লুটপাট এবং অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যেই হোক না কেন তাদের শাস্তির আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। অনাকাঙ্ক্ষিত এই প্রাণহানির প্রতিটি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে। দোষীরা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন বাংলার মাটিতে এদের বিচার করা হবে খুব কঠোরভাবে।