মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় যেভাবে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা


প্রকাশের সময় :৬ জুন, ২০২০ ৩:২৬ : পূর্বাহ্ণ

এম.এইচ মুরাদঃ

করোনাভাইরাসের মহামারিতে সমগ্র বিশ্বের সবকিছুতে এখন ওলট-পালট অবস্হা বিরাজমান। এই করোনা সংকট কত দিন ধরে চলবে, তাও কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না। এখন বলা হচ্ছে, নতুন উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষের খাপ খাইয়ে নেওয়ার কথা। এরই ধারাবাহিকথায় চলে আসছে নতুনভাবে পথ চলার প্রসঙ্গ।

এরই মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন কিন্তু মানুষের মধ্যে চলেও এসেছে। একটু মনে করে দেখুন তো, শেষ কবে বাজার থেকে এত এত কেনাকাটা একসঙ্গে করেছেন? কিংবা শেষ কবে রেস্তোরাঁয় গিয়ে কবজি ডুবিয়ে খেয়েছেন? হিসাব করতে গেলে কিন্তু বেশ গন্ডগোল হয়ে যাবে। গৃহবন্দী দশার কথা ভেবে মন খারাপও হতে পারে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, শুধু মার্চ মাসেই মার্কিন মুলুকে মুদিদোকানের কেনাকাটা গত বছরের চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। ওদিকে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিকিকিনি কমেছে ৬৬ শতাংশ। এপ্রিলের শেষেও মুদিদোকানে কেনাকাটা গড় বিক্রির চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় তা ছিল গড়ের চেয়ে ৪৮ শতাংশ কম। আমেরিকার মতো বাংলাদেশেও চিত্র ভিন্ন হবে না, তা শুধু সাধারণ ছুটি ও তার শর্ত বিবেচনায় নিলেই বোঝা যায়।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এই ভাটার টানের ঠিক বিপরীতে মানুষের ঘরে রান্না করার হার বেড়ে গেছে। কারণ, স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি মহামারির কারণে বেড়েছে অনেক গুণ। মানুষ এখন খাবার বানানোর দিক থেকে অন্যের তুলনায় নিজের ওপরই বেশি বিশ্বাস রাখছে। খাবার ও পানীয় বিপণনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান হান্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি মার্কিন নিজে রান্না করছেন এবং এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ বলছেন, রান্না করা তাঁরা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি উপভোগ করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ বলছে, করোনা মহামারি মানুষের মধ্যে বেশ কিছু আচরণগত পরিবর্তন এনে দিতে পেরে। কিছু প্রবণতা এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে। এগুলো আরও প্রকট হতে পারে।

বাসায় বসে কাজঃ

মহামারির কারণে এরই মধ্যে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাসায় বসে অফিসের কাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বে আগেও এর চল ছিল। কিন্তু অনন্যোপায় হওয়ার পর এই ধরনকেই স্থায়ী করার কথা ভাবছেন অনেক উদ্যোক্তা। বলা হচ্ছে, এর ফলে ব্যয়বহুল অফিস স্থাপন ও এর ব্যবস্থাপনা চালানোর আর প্রয়োজন হবে না। ফলে অনেক খরচ বেঁচে যাবে।

গুগল বলে দিয়েছে, আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত তাদের সিংহভাগ কর্মী নাকি বাড়িতে বসেই অফিসের কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসি তো চান, কর্মীদের স্থায়ীভাবে বাসায় রেখেই কাজ করাতে। এমনকি করোনাকাল চলে যাওয়ার পরও এভাবেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু রাখার পক্ষে তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। জনশুমারি থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে দেশটিতে মাত্র ৩ শতাংশ কর্মী ঘরে বসে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে তা ছিল ৫ শতাংশ। ২০১৮ সালেই ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ পাওয়া কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৯ শতাংশে।

বিশ্বের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, তারা চাইছেন, মোট কর্মশক্তির ২০ শতাংশকে বাড়িতে বসে কাজ করাতে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের ওই জরিপে দেখা গেছে, মূলত খরচ বাঁচাতেই এ সিদ্ধান্ত নিতে চান বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির প্রধান কর্মকর্তারা।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নতুন অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি পুরো বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কর্মীর কাজ করানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম ধারণা আত্তীকরণের কথা ভাবা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে অফিসের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনা যাবে।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, বাসায় বসে কাজ করার এই সুবিধা বড় বড় শহরে হয়তো করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার চাকুরেদের এই সুবিধা দেওয়া কঠিন। আবার উন্নত দেশগুলো যত সহজে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর পক্ষে তা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।

ছোট সংসারঃ

বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি ছোট পরিবার গড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ, রেস্তোরাঁর দিক থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার জন্য নিজেই রান্না করছে। কিন্তু দু-একজনের জন্য হাত পোড়ানো এক কথা, আর ১০-১২ জনের জন্য রান্না করা আরেক। গৃহস্থালিকাজের চাপ কমানোর জন্যই মানুষ হয়তো ছোট সংসার গঠনের দিকে ঝুঁকবে।

এতে সন্তান উৎপাদনের হার কমে যেতে পারে। কারণ, খরচের লাগাম টানা, সঞ্চয় প্রবৃত্তি, রান্নার হ্যাপা প্রভৃতি বিবেচনায় মানুষ ছোট পরিবার গঠনে বেশি আগ্রহী হতে পারে। কেউ কেউ আবার এক সদস্যের পরিবারেও আগ্রহী হতে পারে। কমে যেতে পারে বিয়ের হার।

করোনা মহামারিতে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন দেশে লকডাউন থাকায় অনেকে বলছেন, শিশুর জন্মহার এ সময় বেড়ে যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক রিচার্ড ইভানস মনে করেন, সাধারণ মানুষ এখন জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে রত। যখন কেউ জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর জন্য গলদঘর্ম হয়ে ওঠে, তখন আর যা-ই হোক, সে সন্তান জন্মদানে আগ্রহী

সামাজিক দূরত্বঃ

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বর্তমান করোনা মহামারি ঠেকানোর অন্যতম উপায় হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি মানুষের মনোজগতে এতটাই পরিবর্তন এনেছে যে ধারণা করা হচ্ছে, মহামারির প্রবল রূপ চলে যাওয়ার পরও তা বজায় থাকবে। ফলে সাধারণ ভোক্তারা আর সুপারমার্কেট, শপিং মল বা রেস্তোরাঁয় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সহাবস্থান করায় আগ্রহী হবে না। ফলে এই সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হতে পারে।

একই সমস্যায় পড়তে পারে একসঙ্গে অনেক কর্মী নিয়ে কাজ করা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে একটি বড় জায়গায় অনেক মানুষের অবস্থান নিশ্চিত করা আর লাভজনক থাকবে না। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, এরই মধ্যে এ ধরনের কাজ করা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান উইওয়ার্কের বাজারমূল্য কমতে শুরু করেছে। কারণ একটি বড় স্থানে অনেক মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিতের ব্যবস্থাপনায় মানুষ হুট করেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

একই অবস্থা দেখা দিতে পারে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর প্রচলিত ধারণায়। এক ক্লাসে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকবে—সেই ধারণা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসা অসম্ভব কিছু নয়।

ট্যাগ :