মোঃ মোরশেদুল হক আকবরী:
সাজেক সে যেন একটি স্বপ্নের রাজ্য । যেখানে মেঘ এসে পায়ের কাছে ধরা দেয় । এখানে মেঘ কন্যাকে পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এবং অসাধারণ সব ভিউ পাওয়া যাবে, সেখানে আমরা বন্ধুদেরকে নিয়ে ঘুরছি মেঘের রাজ্যে ভাবতে তো মনটা অন্য রকম।
কী শীত, কী বর্ষা, গ্রীষ্ম ! সবসময় সাজেক অাচ্ছাদিত থাকে শুভ্র কুয়াশার চাঁদরে। তাই সাজেক কে মেঘ কন্যা বা মেঘের রাজ্য বললে ভুল হবে না কারো। আমার দেখা one of the best place in Bangladesh সাজেক। আমি, মুরাদ, জনি, তারেক, হিরু ও খাগড়াছড়ির কিছু কাছের বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে এলাম অবিকল ছবির মতো দেখতে সাজেক ভ্যালি থেকে। সাড়ি সাড়ি মেঘের খেলা অপুরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেক ভ্যালি। আজীবন মনে থাকবে সাজেক ট্যুারের কথা।
মেঘের ভেলায় ভাসতে হলে এখানে আসার বিকল্প নেই। আমাদের ভাগ্য সোনায় সোহাগা। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত ছাড়াও ভরা পূর্নিমায় চাঁদনী রাতে একরাশ জোসনা যখন হাতছানি দিয়ে গাছের আড়াল থেকে উকি দিয়ে ডাকছে তখন আমরা BBQ পার্টির সাক্ষি হতে যাচ্ছিলাম, ইস এই ভরা জোসনায় যদি হূমায়ুন স্যারের গল্পের রূপার মত কেউ পাশে থাকতো রাতটা কত রোমান্টিক হতো?
সাজেকের সবচেয়ে উচু আর সর্বশেষ কমলেক পাহাড়ে শেষ রাতের ভরা পূর্ণিমার আলোয় আরোহন করার সময়ে ভুতুড়ে এডভেঞ্চেরারের ফিলিংসটা আসলেই অন্য রকম।
পথিমধ্যে চোখে পড়বে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না-জানা অসংখ্য নদনদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি, যা কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে যাবে।
সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সাজেক। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়বে যেকোনো আগন্তুক। নাগরিক জীবনের সব ক্লান্তির অবসানে চলে যাবে নিশ্চিত সাজেক ভ্যালিতে এমন চোখ জুড়ানো মনরোম দৃশ্য দেখলে যে কারো মন ভোলাবে।
দার্জিলিংয়ের প্রতিচ্ছবি রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেুশ ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কূলঘেঁষা অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক ভ্যালিতে বসে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে একখণ্ড সময় কাটায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় নৈসর্গিক এ স্থানটির রূপ-লাবণ্যে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সাজেক আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ হয়ে ওঠে। সাজেকের সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু যে কাউকেই মুগ্ধ করবে অনায়াসে।
সাজেক ট্যুরে আমরা কি কি দেখবঃ
সাজেকের প্রধান আকর্ষণ হল কংলাক পাহাড়।সাজেক এর শেষ গ্রাম কংলক পাড়া। এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে।
সাজেকে রয়েছে ২ টি হ্যালিপ্যাড ।যেখান থেকে সূর্যাস্ত- সূর্যদয় দেখা যায়। সাজেক (Sajek Valley) এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণাটি। কমলক ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত।
সাজেক থেকে ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন। খাগড়াছড়ি শহরের আশেপাশে আরও ঘুরে দেখতে পারেন , আলুটিলা গুহা, তারেং হ্যালিপ্যাড, রিসাং ঝর্না , Suspension Bridge, Khagrachhari – ঝুলন্ত সেতু।
সাজেকে কোথায় থাকবেনঃ
সাজেকে থাকার জন্য অনেক রিসোর্ট, কটেজ ও আদিবাসিদের বাড়িতে থাকা যায়। সাজেকে থাকার জন্য অবশ্যই আগে বুকিং দিয়ে যাবেন। কিন্তু অফ সিজনে সাজেক যেয়েও রুম বুকিং দেওয়া যায়। খুব ভাল ভিউ পাওয়া যায় এমন কয়েকটা রিসোর্ট হল মেঘ মাচাং,মেঘ পুঞ্জি , জুম ঘর, এছাড়া সেনাবাহিনীর কিছু ভাল মানের কটেজ আছে সাজেকে। আমরা মেঘ কাব্যতে ছিলাম।
সাজেকে ১৫০০ -৩০০০ টাকায় ভাল কটেজ পাওয়া যায়।
সাজেকে কোথায় খাবেনঃ সাজেকে খাওয়ার জন্য অবশ্যই আগে অর্ডার করতে হয়।খাবারের মিনিমাম ১ ঘন্টা আগে অর্ডার করতে হয়।
সাজেকে প্রতিবেলা খাবারের বিভিন্ন প্যাকেজ সিস্টেম পাওয়া যায়।
১. ভাত+ডাল+আলুভর্তা+সবজি+দেশি মুরগী দাম ২০০ টাকা
২. ভাত+ডাল+আলুভর্তা+সবজি+ফার্মের মুরগী দাম ১৫০ টাকা
রাতে ব্যাম্বু চিকেন অথবা বারবিকিউ খেতে পারেন দাম পড়বে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা।
আমার কাছে মারুতি হোটেল ও চিম্বাল এর খাওয়ার ভালো লেগেছে, এছাড়াও আরো অসংখ্যা হোটেল রয়েছে।
সাজেকে ৩ বেলা খাবারের জন্য মিনিমাম ৮০০ টাকা বাজেট রাখবেন।সাজেকে পাহাড়িদের ট্র্যাডিশনাল খাবারও পাওয়া যায়।
আর হ্যাঁ খাগড়াছড়ি ফিরে অবশ্যই সিস্টেম রেস্তোরাতে খেতে ভুলবেন না।
সাজেকে পানির অনেক দাম।তাই দীঘিনালা থেকে পানি কিনে নিলে ভাল হবে।
সাজেকে কিভাবে যাবেনঃ
রুট -০১:
ঢাকা থেকে বাসে – ঢাকা- খাগড়াছড়ি- সাজেক।তারপর চান্দের গাড়িতে সাজেক।
রুট – ০২: ঢাকা থেকে মেইল ট্রেনে ফেনী তারপর শান্তি পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি । ফেনী থেকে বাস ছাড়ে ৮ঃ৩০ সকাল ।তারপর খাগড়াছড়ি থেকে চান্দের গাড়িতে সাজেক।
রুট-০৩: চট্রগ্রাম থেকে বাসে খাগড়াছড়ি ।দুই ধরণের বাস চলে
১/ শান্তি পরিবহণের সিটিং সার্ভিস ভাড়া দিঘীনালা পর্যন্ত ২৪০ টাকা।
২/ লোকাল বাস – ভাড়া = ১৫০ টাকা।
সাজেকে চান্দের গাড়ি ২ টা ইস্কটে ছেড়ে যায়।প্রথম ইস্কট সকাল ১০:৩০ এ , অন্যটা বিকাল ৩:৩০ এ ছেড়ে যায়।
এই ট্যুরের খরচঃ আপনারা ট্যুরে যাওয়ার আগে এই খরচের বিষয়টা নিয়েই সবচেয়ে বেশী ঘষামাজা করেন।
আসুন তাহলে খরচের লিস্টটা দেখে নেইঃ
বাস ভাড়া= ঢাকা – খাগড়াছড়ি = ৫২০+৫২০
কটেজ ভাড়া = ৫০০ (৪ জনের জন্য এক রুম)
চান্দের গাড়ি রিজার্ভ = ৭০০(১০ জনের গ্রুপ )
সাজেকে খাওয়া খরচ = ৭৫০ (তিন বেলা )
বাকি তিন বেলা খাবার খরচ = ২৫০+১২০+১২০ ( খাগড়াছড়ি শহরে)
এন্টি ফি =৭০ টাকা ( সাজেক, আলু টিলা, জুলন্ত ব্রিজ)
এই গুলো টোটাল করলেই পেয়ে যাবেন আপনার সাজেক ট্যুরের খরচের আইডিয়া।মেইল ট্রেইন আর চট্রগ্রাম থেকে আসলে খরচ আরও কম হবে।
টিবিশেষ কিছু টিপস : ১ .অবশ্যই আইডি কার্ড নিয়ে যাবেন।
২ . পাওয়ার ব্যাংক এবং খাগড়াছড়ি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি কিনে নিয়ে যাবেন , সাজেকে বিদ্যুতের কোনো ব্যাবস্থা নেই, আর পানির দাম বেশি। (তবে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়)।